০২:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পিএমখালীতে থামছে না টপসয়েল পাচার

ফসলি জমির মাটি কাটা কিছুতেই থামছে না। শক্তিশালী মাটিখেঁকো চক্র ফসলি জমির মাটি কাটছে। এসব মাটি বিক্রি করছে বিভিন্ন ইটভাটায় ও জমি ভরাট কাজে। এর ফলে একদিকে ফসলি জমি পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে খাদ্য উৎপাদন কমার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ।
সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। অবৈধ লাভের আশায় এ কাজের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও একটি চিহ্নিত চক্র। ইটভাটার মালিক ও ডাম্পার মালিকের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে মাটি কাটার বিষয়ে অবহিত হওয়ার পরও নীরবতা পালন করছেন স্থানীয় প্রশাসন অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।
জানা যায়, সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নে এক্সকাভেটর ও শ্রমিক দিয়ে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে অর্ধশতাধিক ডাম্পার ট্রাক দিয়ে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটা সহ জমি ভরাট কাজে। এভাবে জমির মাটি কাটার ফলে আবাদি জমির উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে মাটির জৈব গুণাগুণ। নিচু হয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি। ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাটিখেকো চক্রের ভয়ালকাণ্ডের নজির। ফলে নানামুখী সংকটে রয়েছে স্থানীয় লোকজন ও এখানকার পরিবেশ-প্রকৃতি। এক্সেভেটরের মাধ্যমে সূর্য ডুবার সাথে সাথেই পরদিন সকাল পর্যন্ত চলছে মাটি কাটার উৎসব। উক্ত এলাকার ছনখোলা বড় বিলের মাদার গাছ তলা নামক স্থান থেকে ডাম্পারে করে মাটি নিয়ে যেতে পিচ ঢালাই রাস্তা কেটে বিকল্প রাস্তা তৈরি করেছে। সন্ধ্যার পরপরই এ স্থান থেকে কাটা হয় মাটি। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে এ দৃশ্য দেখা দেখা মেলে। আর সাপ্তাহ দু’য়েক ব্যবধানে সংস্কার করা কোটি কোটি টাকার পিচঢালাইকৃত রাস্তাটি ডাম্পারের চাকাই পিষ্ট হয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।
একটি সূত্র জানান, চাকমারকূল, তেচ্ছিপুল, ঝিলংজা, চৌফলদণ্ডী, পিএমখালী, রামুর স্থানীয় বিভিন্ন ব্রিকফিল্ডের চাহিদা মেটাতে ফসলি জমি থেকে নির্বিচারে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কাটা হচ্ছে। কালক্রমে শহর এলাকার পাশাপাশি সমানতালে চলছে গ্রামেগঞ্জেও বহুতল ভবন নির্মাণ। এমতাবস্থায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বেড়েছে ইটের চাহিদা। তাই ইটভাটার মালিকরা তাদের ভাটায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মাটি মজুদ করে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেন। স্থানীয় চক্রের সদস্যরা জমির মালিকদের মগজধোলাই করে টাকার লোভে ফেলে কেটে নিচ্ছেন ফসলি জমির মাটি। অবাধে মাটি কাটার ফলে এসব ইউনিয়নের আবাদি জমি নিচু হয়ে গেছে।
সচেতন মহলের ভাষ্য, এভাবে জমির মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে একসময় কৃষিতে বিপর্যয় দেখা দেবে। কমে যাবে আবাদি জমির পরিমাণ। জমি থেকে কেটে নেওয়া মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার জায়গা, সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ পরিবেশ আইন অনুযায়ী, কৃষি জমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২-এর ৬ ধারায়) অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। দুই আইনে শাস্তির বিধান একই রকম। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলা ও নির্লিপ্ততায় মাটি খেকোদের দৌরাত্ম্য থামছে না। যাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো আইন ভঙ্গকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া। সেখানে প্রশাসনের নিকট থেকে মাটি খেকো চক্র পাচ্ছেন সহযোগিতা।
এ ব্যাপারে প্রশাসনের বড় কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি, নিবেন বলে জানালেও আদৌ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

‘স্টেপ ডাউন ইউনুস’পোস্ট করে আটক হলেন যুবক!

পিএমখালীতে থামছে না টপসয়েল পাচার

প্রকাশিত সময় : ০১:৫৮:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪

ফসলি জমির মাটি কাটা কিছুতেই থামছে না। শক্তিশালী মাটিখেঁকো চক্র ফসলি জমির মাটি কাটছে। এসব মাটি বিক্রি করছে বিভিন্ন ইটভাটায় ও জমি ভরাট কাজে। এর ফলে একদিকে ফসলি জমি পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে খাদ্য উৎপাদন কমার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ।
সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। অবৈধ লাভের আশায় এ কাজের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও একটি চিহ্নিত চক্র। ইটভাটার মালিক ও ডাম্পার মালিকের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে মাটি কাটার বিষয়ে অবহিত হওয়ার পরও নীরবতা পালন করছেন স্থানীয় প্রশাসন অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।
জানা যায়, সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নে এক্সকাভেটর ও শ্রমিক দিয়ে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে অর্ধশতাধিক ডাম্পার ট্রাক দিয়ে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটা সহ জমি ভরাট কাজে। এভাবে জমির মাটি কাটার ফলে আবাদি জমির উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে মাটির জৈব গুণাগুণ। নিচু হয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি। ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাটিখেকো চক্রের ভয়ালকাণ্ডের নজির। ফলে নানামুখী সংকটে রয়েছে স্থানীয় লোকজন ও এখানকার পরিবেশ-প্রকৃতি। এক্সেভেটরের মাধ্যমে সূর্য ডুবার সাথে সাথেই পরদিন সকাল পর্যন্ত চলছে মাটি কাটার উৎসব। উক্ত এলাকার ছনখোলা বড় বিলের মাদার গাছ তলা নামক স্থান থেকে ডাম্পারে করে মাটি নিয়ে যেতে পিচ ঢালাই রাস্তা কেটে বিকল্প রাস্তা তৈরি করেছে। সন্ধ্যার পরপরই এ স্থান থেকে কাটা হয় মাটি। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে এ দৃশ্য দেখা দেখা মেলে। আর সাপ্তাহ দু’য়েক ব্যবধানে সংস্কার করা কোটি কোটি টাকার পিচঢালাইকৃত রাস্তাটি ডাম্পারের চাকাই পিষ্ট হয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।
একটি সূত্র জানান, চাকমারকূল, তেচ্ছিপুল, ঝিলংজা, চৌফলদণ্ডী, পিএমখালী, রামুর স্থানীয় বিভিন্ন ব্রিকফিল্ডের চাহিদা মেটাতে ফসলি জমি থেকে নির্বিচারে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কাটা হচ্ছে। কালক্রমে শহর এলাকার পাশাপাশি সমানতালে চলছে গ্রামেগঞ্জেও বহুতল ভবন নির্মাণ। এমতাবস্থায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বেড়েছে ইটের চাহিদা। তাই ইটভাটার মালিকরা তাদের ভাটায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মাটি মজুদ করে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেন। স্থানীয় চক্রের সদস্যরা জমির মালিকদের মগজধোলাই করে টাকার লোভে ফেলে কেটে নিচ্ছেন ফসলি জমির মাটি। অবাধে মাটি কাটার ফলে এসব ইউনিয়নের আবাদি জমি নিচু হয়ে গেছে।
সচেতন মহলের ভাষ্য, এভাবে জমির মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে একসময় কৃষিতে বিপর্যয় দেখা দেবে। কমে যাবে আবাদি জমির পরিমাণ। জমি থেকে কেটে নেওয়া মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার জায়গা, সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ পরিবেশ আইন অনুযায়ী, কৃষি জমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২-এর ৬ ধারায়) অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। দুই আইনে শাস্তির বিধান একই রকম। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলা ও নির্লিপ্ততায় মাটি খেকোদের দৌরাত্ম্য থামছে না। যাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো আইন ভঙ্গকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া। সেখানে প্রশাসনের নিকট থেকে মাটি খেকো চক্র পাচ্ছেন সহযোগিতা।
এ ব্যাপারে প্রশাসনের বড় কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি, নিবেন বলে জানালেও আদৌ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।