০৫:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘যৌক্তিক’ মূল্য নির্ধারণের পর দাম আরও বেড়েছে

রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজার কারওয়ান বাজারে প্রতিদিন মানুষ ছুটে যান সব ধরনের নিত্যপণ্য কিনতে। সেখানে রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, বাজার করতে আসা মানুষের মুখে একটাই কথা, ‘জিনিসপত্রের এত দাম!’ এখানে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘শুনেছি, সরকার ২৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। সরকারি দাম কেতাবে আছে, বাস্তবে নেই। এটি প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না। আমরা সাধারণ মানুষ, সীমিত ইনকাম করি। দাম নিয়ে আমরা তো হিমশিম খাচ্ছি।’

২০১৮ সালের কৃষি বিপণন আইনের অধীনে গত শুক্রবার ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে সরকার। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাণিজ্য এবং কৃষি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে। উভয় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মাঠে উপস্থিত থাকবেন এবং ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কৃষি বিপণন আইন প্রয়োগ করবেন, যার মধ্যে জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির বিধান রয়েছে। দাম নির্ধারণের দ্বিতীয় দিনে গতকালও বাজারে বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। পণ্যের বেশির ভাগই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উল্টো গতকাল কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। দামের লাগাম টানতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঠে থাকলেও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কেউ নেই। দাম নির্ধারণ করে দিয়ে বিপণনের কর্মকর্তারা ঘরে বসে আছেন। তবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্য তদারকি করছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ২৭টি টিম সারাদেশে ৭৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ ৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সীমিত ও নিম্ন আয়ের পরিবারের মানুষ। চাকরিজীবী বা সীমিত আয়ের অনেকে খরচ পোষাতে আগের তুলনায় অর্ধেক পরিমাণে পণ্য কিনছেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জন চাকরি করেন, এমন পরিবারেও চলছে টানাটানি। অনেকে খরচ কমাতে বাড়িতে ভালো খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

বাজারে উল্টো চিত্র
বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে রোজার আগে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরে শুল্ক ও কর কমায় সরকার। এরপরও দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বরং রমজানকে ঘিরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। বাধ্য হয়ে শুক্রবার গরুর মাংস, ছোলা, ব্রয়লার মুরগিসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয় সরকার। তাতেও সুফল মেলেনি।
গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্য। ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলছেন, শুধু দাম নির্ধারণ করে দিয়েই দায় সারছে সরকার। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে সরকার শুধু কঠোর হুঁশিয়ারির কথা মুখে বলে কিন্তু তার প্রয়োগ নেই বাজারে। নিয়মিত তদারকি বাড়ানো, প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও সক্রিয়ভাবে বাজার মনিটরিংয়ে নামানোর দাবি জানান তারা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার, কৃষি মার্কেট ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংস আগের দামেই ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ৬৬৪ টাকা। ব্রয়লার মুরগির বেঁধে দেওয়া দাম ১৭৫ টাকা। কিন্তু বাজারে ৩৫-৪০ টাকা বেশি দরে ২১০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি জাতের মুরগি সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ২৬২ টাকা। অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায়। রমজানের আরেক প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছোলা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ১২ থেকে ১৫ টাকা বেশিতে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসুর ডালের নির্ধারিত মূল্য ১০৬ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। এ ছাড়া প্রকারভেদে প্রতি কেজি মুগ ডাল নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩৫ টাকা বেশি দরে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়, খেসারি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন মুরগির ডিম ১৩৫ টাকা ও হাঁসের ডিম ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে বাজারে।

সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করার কথা ২৯ টাকায়। গত শুক্রবার আলুর দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়। অথচ গত এক সপ্তাহে দেশের দুটি বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৫৭০ টন আলু এসেছে। খোলা সয়াবিন তেল গত দুই দিনে লিটারে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫২ টাকা। কাঁচামরিচের দাম ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিড়ার দাম ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। রুই মাছের কেজি ২৯০ টাকা নির্ধারিত হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকায়, কাতলা মাছ ৫০ টাকা বেশি দরে ৪০০ টাকায়, পাঙাশ ২০ টাকা বেশি দরে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

টাউনহল বাজারের মুদি দোকানি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ভালো কথা; কিন্তু পরিবহন, শ্রমিক খরচ, রাস্তায় চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের খরচ, এগুলো কি কমিয়েছে বা নিয়ন্ত্রণ করেছে? তাহলে কীভাবে বাজারে নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি হবে?

ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
রাজধানীর আদাবরের বাসিন্দা মাহমুদা আক্তার সকালে কৃষি মার্কেটে বাজার করতে আসেন। একটি মুদি দোকানে তাঁর সঙ্গে কথা হলো। তিনি বলেন, সপ্তাহে ৩ হাজার টাকার মধ্যে যেসব পণ্য কিনতেন, তাতে এখন লাগছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। মানে দেড় হাজার টাকা বেশি। তবে আয় না বাড়ায় ওই আগের (৩ হাজার) টাকার মধ্যেই পণ্য কিনতে হচ্ছে। এতে পণ্য কেনার পরিমাণ অনেক কমে গেছে। তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই চাকরি করেন। তার পরও তাদের এ অবস্থা।
টাউনহল বাজারে কথা হয় আবু বকরের সঙ্গে। তিনি মোহম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি ছোট্ট বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন। বাজারের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অল্প বেতনের চাকরি করতাম। গত বছর অবসরে যাই। বর্তমানে একটি পান-সিগারেটের দোকান দিয়েছি। যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বাসা থেকে বাজারের জন্য যে টাকা এনেছিলাম, তা দিয়ে অর্ধেক বাজারই করতে পারলাম না! ’

নিশ্চুপ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর
গত শুক্রবার ২৯ পণ্যের দাম নির্ধারণের দিন এবং পরদিন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম। গতকাল সারাদিনে তাঁকে অন্তত ১০ বার ফোন করার পরও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এতদিন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে মহাপরিচালকের মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকলেও, গতকাল ওয়েবসাইট থেকে মোবাইল নম্বর হাওয়া হয়ে গেছে। সরকারি ছুটির কারণে গতকাল অফিস বন্ধ ছিল। ফলে সরাসরি দেখা করারও সুযোগ ছিল না। মহাপরিচালককে না পেয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের আরও তিন কর্মকর্তাকে ফোন করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মহাপরিচালক আর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্য কর্মকর্তাদেরও বলে দিয়েছেন তাঁর অনুমতি ছাড়া যেন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলেন।

গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর টিসিবি ভবনে আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের বলেন, দাম নির্ধারণের সঙ্গে সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন। তবে বাজারে এসব নিত্যপণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার। এ জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একসঙ্গে কাজ করবেন।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

চকরিয়ায় বসতভিটা ও দোকান দখলের জন্য হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট: আহত ৫

‘যৌক্তিক’ মূল্য নির্ধারণের পর দাম আরও বেড়েছে

প্রকাশিত সময় : ০৯:১৪:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪

রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজার কারওয়ান বাজারে প্রতিদিন মানুষ ছুটে যান সব ধরনের নিত্যপণ্য কিনতে। সেখানে রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, বাজার করতে আসা মানুষের মুখে একটাই কথা, ‘জিনিসপত্রের এত দাম!’ এখানে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘শুনেছি, সরকার ২৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। সরকারি দাম কেতাবে আছে, বাস্তবে নেই। এটি প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না। আমরা সাধারণ মানুষ, সীমিত ইনকাম করি। দাম নিয়ে আমরা তো হিমশিম খাচ্ছি।’

২০১৮ সালের কৃষি বিপণন আইনের অধীনে গত শুক্রবার ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে সরকার। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাণিজ্য এবং কৃষি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে। উভয় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মাঠে উপস্থিত থাকবেন এবং ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কৃষি বিপণন আইন প্রয়োগ করবেন, যার মধ্যে জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির বিধান রয়েছে। দাম নির্ধারণের দ্বিতীয় দিনে গতকালও বাজারে বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। পণ্যের বেশির ভাগই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উল্টো গতকাল কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। দামের লাগাম টানতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঠে থাকলেও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কেউ নেই। দাম নির্ধারণ করে দিয়ে বিপণনের কর্মকর্তারা ঘরে বসে আছেন। তবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্য তদারকি করছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ২৭টি টিম সারাদেশে ৭৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ ৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সীমিত ও নিম্ন আয়ের পরিবারের মানুষ। চাকরিজীবী বা সীমিত আয়ের অনেকে খরচ পোষাতে আগের তুলনায় অর্ধেক পরিমাণে পণ্য কিনছেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জন চাকরি করেন, এমন পরিবারেও চলছে টানাটানি। অনেকে খরচ কমাতে বাড়িতে ভালো খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

বাজারে উল্টো চিত্র
বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে রোজার আগে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরে শুল্ক ও কর কমায় সরকার। এরপরও দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বরং রমজানকে ঘিরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। বাধ্য হয়ে শুক্রবার গরুর মাংস, ছোলা, ব্রয়লার মুরগিসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয় সরকার। তাতেও সুফল মেলেনি।
গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্য। ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলছেন, শুধু দাম নির্ধারণ করে দিয়েই দায় সারছে সরকার। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে সরকার শুধু কঠোর হুঁশিয়ারির কথা মুখে বলে কিন্তু তার প্রয়োগ নেই বাজারে। নিয়মিত তদারকি বাড়ানো, প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও সক্রিয়ভাবে বাজার মনিটরিংয়ে নামানোর দাবি জানান তারা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার, কৃষি মার্কেট ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংস আগের দামেই ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ৬৬৪ টাকা। ব্রয়লার মুরগির বেঁধে দেওয়া দাম ১৭৫ টাকা। কিন্তু বাজারে ৩৫-৪০ টাকা বেশি দরে ২১০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি জাতের মুরগি সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ২৬২ টাকা। অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায়। রমজানের আরেক প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছোলা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ১২ থেকে ১৫ টাকা বেশিতে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসুর ডালের নির্ধারিত মূল্য ১০৬ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। এ ছাড়া প্রকারভেদে প্রতি কেজি মুগ ডাল নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩৫ টাকা বেশি দরে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়, খেসারি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন মুরগির ডিম ১৩৫ টাকা ও হাঁসের ডিম ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে বাজারে।

সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করার কথা ২৯ টাকায়। গত শুক্রবার আলুর দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়। অথচ গত এক সপ্তাহে দেশের দুটি বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৫৭০ টন আলু এসেছে। খোলা সয়াবিন তেল গত দুই দিনে লিটারে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫২ টাকা। কাঁচামরিচের দাম ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিড়ার দাম ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। রুই মাছের কেজি ২৯০ টাকা নির্ধারিত হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকায়, কাতলা মাছ ৫০ টাকা বেশি দরে ৪০০ টাকায়, পাঙাশ ২০ টাকা বেশি দরে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

টাউনহল বাজারের মুদি দোকানি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ভালো কথা; কিন্তু পরিবহন, শ্রমিক খরচ, রাস্তায় চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের খরচ, এগুলো কি কমিয়েছে বা নিয়ন্ত্রণ করেছে? তাহলে কীভাবে বাজারে নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি হবে?

ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
রাজধানীর আদাবরের বাসিন্দা মাহমুদা আক্তার সকালে কৃষি মার্কেটে বাজার করতে আসেন। একটি মুদি দোকানে তাঁর সঙ্গে কথা হলো। তিনি বলেন, সপ্তাহে ৩ হাজার টাকার মধ্যে যেসব পণ্য কিনতেন, তাতে এখন লাগছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। মানে দেড় হাজার টাকা বেশি। তবে আয় না বাড়ায় ওই আগের (৩ হাজার) টাকার মধ্যেই পণ্য কিনতে হচ্ছে। এতে পণ্য কেনার পরিমাণ অনেক কমে গেছে। তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই চাকরি করেন। তার পরও তাদের এ অবস্থা।
টাউনহল বাজারে কথা হয় আবু বকরের সঙ্গে। তিনি মোহম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি ছোট্ট বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন। বাজারের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অল্প বেতনের চাকরি করতাম। গত বছর অবসরে যাই। বর্তমানে একটি পান-সিগারেটের দোকান দিয়েছি। যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বাসা থেকে বাজারের জন্য যে টাকা এনেছিলাম, তা দিয়ে অর্ধেক বাজারই করতে পারলাম না! ’

নিশ্চুপ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর
গত শুক্রবার ২৯ পণ্যের দাম নির্ধারণের দিন এবং পরদিন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম। গতকাল সারাদিনে তাঁকে অন্তত ১০ বার ফোন করার পরও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এতদিন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে মহাপরিচালকের মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকলেও, গতকাল ওয়েবসাইট থেকে মোবাইল নম্বর হাওয়া হয়ে গেছে। সরকারি ছুটির কারণে গতকাল অফিস বন্ধ ছিল। ফলে সরাসরি দেখা করারও সুযোগ ছিল না। মহাপরিচালককে না পেয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের আরও তিন কর্মকর্তাকে ফোন করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মহাপরিচালক আর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্য কর্মকর্তাদেরও বলে দিয়েছেন তাঁর অনুমতি ছাড়া যেন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলেন।

গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর টিসিবি ভবনে আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের বলেন, দাম নির্ধারণের সঙ্গে সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন। তবে বাজারে এসব নিত্যপণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার। এ জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একসঙ্গে কাজ করবেন।