০৭:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শরীরে কোন কোন নাপাকি লাগলে নামাজ হবে না

ইসলাম ধর্মে পবিত্রতাকে ইমানের অংশ বলা হয়েছে। পবিত্র থাকাকে মুমিনের গুণ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা নিজে ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি পবিত্র ব্যক্তিকে ভালোবাসেন।

পবিত্রতা নামাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। নামাজি ব্যক্তির শরীর ও কাপড় নাপাকি থেকে পবিত্র না থাকলে নামাজ শুদ্ধ হয় না।

নামাজি ব্যক্তির শরীর তো ওজু বা গোসলের মাধ্যমে পবিত্র হয়ে যায়। কিন্তু বিপাকে পড়তে হয় কাপড়ে লেগে থাকা নাপাকি নিয়ে। কখনো কখনো বেখেয়ালে কাপড়ে সামান্য নাপাকি লেগে যায়।

তখনই মনে প্রশ্ন ওঠে— এই সামান্য নাপাকিতে কি কাপড় নাপাক হয়ে গেল? এ কাপড় পরে কি তা হলে নামাজ হবে না? আজকে আমরা এই বিষয়েই জানব।

নাপাকি প্রধানত দুই প্রকার

১. নাজাসাতে গলিযা। অর্থাৎ যে নাপাকির হুকুম শক্ত।
২. নাজাসাতে খফিফা। অর্থাৎ যে নাপাকির হুকুম কিছু্টা হালকা।

নাজাসাতে গলিযা আবার দুই প্রকার

১. তরল নাপাকি যেমন মানুষের পেশাব, রক্ত, বীর্য, মদ, মৃত প্রাণীর শরীর থেকে নির্গত তরল পদার্থ ইত্যাদি।
২. গাঢ় বা শক্ত নাপাকি যেমন মানুষের মল, পশুর পায়খানা, হাঁস ও মুরগির বিষ্ঠা ইত্যাদি।

নাজাসাতে গলিযার মধ্যে যেগুলো তরল সেগুলোর হুকুম হলো

এক দেরহাম (তথা গোলাকৃতভাবে কাঁচাটাকা পরিমাণ, যা হাতের তালুর নিচু স্থান পরিমাণ হয়) পরিমাণ বা তার কম শরীর বা কাপড়ে লেগে গেলে কাপড় বা শরীর নাপাক হবে না।

নাজাসাতে গলিযার মধ্যে যেগুলো গাঢ় ও শক্ত নাপাকি সেগুলোর হুকুম হলো—

এক সিঁকি পর্যন্ত অর্থাৎ ৪.৩৭ গ্রাম পরিমাণ বা এর কম কাপড় বা শরীরে লাগলে তা নাপাক হবে না। অবশ্য নাপাকি দূর করা সম্ভব হলে এ পরিমাণ নাজাসাতে গলিযা নিয়ে নামায পড়া মাকরূহ তাহরিমি হবে।

যেসব বস্তু নাজাসাতে খফিফা

গরু, মহিষ, বকরি ইত্যাদি সব হালাল পশুর পেশাব, কাক চিল ইত্যাদি সব হারাম পাখির বিষ্ঠা এবং ঘোড়ার পেশাব হলো নাজাসাতে খফিফা।

নাজাসাতে খফিফার হুকুম
শরীর বা কাপড়ের যে অঙ্গে লেগেছে তার চার ভাগের এক ভাগের কম হলে কাপড় নাপাক হবে না। অবশ্য এ নাপাকি ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলে তা নিয়ে নামাজ আদায় করা মাকরুহ তাহরিমি হবে।

নাপাক থেকে পবিত্র হওয়ার পদ্ধতি

গাঢ় নাপাকি যেমন— রক্ত, পায়খানা শরীর বা কাপড়ে লাগলে তা নাপাকি পরিপূর্ণ দূর হওয়া পর্যন্ত ধৌত করতে হবে । এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ তিনবার ধোয়া জরুরি বলে থাকে তা সঠিক নয়। তিন বারের কমে যদি নাপাকি চলে যায় তবু কাপড় পাক হয়ে যাবে। তবে তিনবার ধোয়া ভালো।

তরল নাপাকি যেমন মানুষের পেশাব, রক্ত, বীর্য, মদ, মৃত প্রাণীর শরীর থেকে নির্গত তরল পদার্থ ইত্যাদি লাগলে তা বালতি বা ছোট বদ্ধ জায়গার পানি দ্বারা পবিত্র করতে চাইলে তিন বার ধৌত করা এবং প্রত্যেক বার নিংড়ানো জরুরি।

তবে যদি এমন কাপড় বড় পুকুরে ভালোভাবে ধৌত করা হয় কিংবা ছোট বদ্ধ জায়গায় না ধুয়ে নাপাকির উপর অধিক পরিমাণ পানি ঢালা হয় কিংবা এ কাপড়ের উপর দিয়ে প্রচুর পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয়ে যায়, যার দ্বারা নাপাকি দূর হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হয় তবে তিন বার ধোয়া ও নিংড়ানোর প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে কাপড় তিনবার ধোয়া ও নিংড়ানো ছাড়াই পাক হয়ে যায়।

সূত্র: হাশিয়াতুত তাহতাবি পৃ: ১৫৪, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া ১/৪৫৩, ফতোয়ায়ে আলমগিরি ১/৯৬, রদ্দুল মুহতার ১/৩৭৯, বাদায়িউসসানায়ে ১/১৯৮

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আলুর দাম আরও বেড়েছে, স্বস্তি নেই ডিম-সবজিতেও

শরীরে কোন কোন নাপাকি লাগলে নামাজ হবে না

প্রকাশিত সময় : ০৯:৩৯:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪

ইসলাম ধর্মে পবিত্রতাকে ইমানের অংশ বলা হয়েছে। পবিত্র থাকাকে মুমিনের গুণ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা নিজে ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি পবিত্র ব্যক্তিকে ভালোবাসেন।

পবিত্রতা নামাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। নামাজি ব্যক্তির শরীর ও কাপড় নাপাকি থেকে পবিত্র না থাকলে নামাজ শুদ্ধ হয় না।

নামাজি ব্যক্তির শরীর তো ওজু বা গোসলের মাধ্যমে পবিত্র হয়ে যায়। কিন্তু বিপাকে পড়তে হয় কাপড়ে লেগে থাকা নাপাকি নিয়ে। কখনো কখনো বেখেয়ালে কাপড়ে সামান্য নাপাকি লেগে যায়।

তখনই মনে প্রশ্ন ওঠে— এই সামান্য নাপাকিতে কি কাপড় নাপাক হয়ে গেল? এ কাপড় পরে কি তা হলে নামাজ হবে না? আজকে আমরা এই বিষয়েই জানব।

নাপাকি প্রধানত দুই প্রকার

১. নাজাসাতে গলিযা। অর্থাৎ যে নাপাকির হুকুম শক্ত।
২. নাজাসাতে খফিফা। অর্থাৎ যে নাপাকির হুকুম কিছু্টা হালকা।

নাজাসাতে গলিযা আবার দুই প্রকার

১. তরল নাপাকি যেমন মানুষের পেশাব, রক্ত, বীর্য, মদ, মৃত প্রাণীর শরীর থেকে নির্গত তরল পদার্থ ইত্যাদি।
২. গাঢ় বা শক্ত নাপাকি যেমন মানুষের মল, পশুর পায়খানা, হাঁস ও মুরগির বিষ্ঠা ইত্যাদি।

নাজাসাতে গলিযার মধ্যে যেগুলো তরল সেগুলোর হুকুম হলো

এক দেরহাম (তথা গোলাকৃতভাবে কাঁচাটাকা পরিমাণ, যা হাতের তালুর নিচু স্থান পরিমাণ হয়) পরিমাণ বা তার কম শরীর বা কাপড়ে লেগে গেলে কাপড় বা শরীর নাপাক হবে না।

নাজাসাতে গলিযার মধ্যে যেগুলো গাঢ় ও শক্ত নাপাকি সেগুলোর হুকুম হলো—

এক সিঁকি পর্যন্ত অর্থাৎ ৪.৩৭ গ্রাম পরিমাণ বা এর কম কাপড় বা শরীরে লাগলে তা নাপাক হবে না। অবশ্য নাপাকি দূর করা সম্ভব হলে এ পরিমাণ নাজাসাতে গলিযা নিয়ে নামায পড়া মাকরূহ তাহরিমি হবে।

যেসব বস্তু নাজাসাতে খফিফা

গরু, মহিষ, বকরি ইত্যাদি সব হালাল পশুর পেশাব, কাক চিল ইত্যাদি সব হারাম পাখির বিষ্ঠা এবং ঘোড়ার পেশাব হলো নাজাসাতে খফিফা।

নাজাসাতে খফিফার হুকুম
শরীর বা কাপড়ের যে অঙ্গে লেগেছে তার চার ভাগের এক ভাগের কম হলে কাপড় নাপাক হবে না। অবশ্য এ নাপাকি ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলে তা নিয়ে নামাজ আদায় করা মাকরুহ তাহরিমি হবে।

নাপাক থেকে পবিত্র হওয়ার পদ্ধতি

গাঢ় নাপাকি যেমন— রক্ত, পায়খানা শরীর বা কাপড়ে লাগলে তা নাপাকি পরিপূর্ণ দূর হওয়া পর্যন্ত ধৌত করতে হবে । এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ তিনবার ধোয়া জরুরি বলে থাকে তা সঠিক নয়। তিন বারের কমে যদি নাপাকি চলে যায় তবু কাপড় পাক হয়ে যাবে। তবে তিনবার ধোয়া ভালো।

তরল নাপাকি যেমন মানুষের পেশাব, রক্ত, বীর্য, মদ, মৃত প্রাণীর শরীর থেকে নির্গত তরল পদার্থ ইত্যাদি লাগলে তা বালতি বা ছোট বদ্ধ জায়গার পানি দ্বারা পবিত্র করতে চাইলে তিন বার ধৌত করা এবং প্রত্যেক বার নিংড়ানো জরুরি।

তবে যদি এমন কাপড় বড় পুকুরে ভালোভাবে ধৌত করা হয় কিংবা ছোট বদ্ধ জায়গায় না ধুয়ে নাপাকির উপর অধিক পরিমাণ পানি ঢালা হয় কিংবা এ কাপড়ের উপর দিয়ে প্রচুর পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয়ে যায়, যার দ্বারা নাপাকি দূর হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হয় তবে তিন বার ধোয়া ও নিংড়ানোর প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে কাপড় তিনবার ধোয়া ও নিংড়ানো ছাড়াই পাক হয়ে যায়।

সূত্র: হাশিয়াতুত তাহতাবি পৃ: ১৫৪, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া ১/৪৫৩, ফতোয়ায়ে আলমগিরি ১/৯৬, রদ্দুল মুহতার ১/৩৭৯, বাদায়িউসসানায়ে ১/১৯৮