০৪:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজার শহরে কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব, আইনশৃঙ্খলার অবনতির শংকা

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে স্বাগত জানিয়ে কক্সবাজার শহরের অলিতে গলিতে বাণিজ্যিক মার্কেটে দিন দিন বাড়ছে কিশোর গ্যাং অপরাধী। এলাকা দাবড়ে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এরা কখনও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে, স্কুলগামী ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করছে, আবার কখনও বা বিভিন্ন স্পট থেকে ছিনতাই করছে। এদের কারণে কক্সবাজার শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
এই দিকে কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়িসহ জেলা প্রশাসন এসব কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করলে সাময়িক গা ডাকা দিলেও পূণরায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

কক্সবাজার শহরে ইদুল ফিতরের কেনাকাটা করতে আসা রামুর ইদ্রিস নাম এক ব্যক্তি জানান, তিনি বাজার ঘাটা এলাকায় সিএনজি হতে নেমে পান বাজার রোডে আসার পথে একদল কিশোর গ্যাং তাকে গতিরোধ করে হোটেল সী হার্টের পিছনের গলিতে নিয়ে গিয়ে তাকে মারধর করে এবং ছুরি দিয়ে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে নগদ টাকাসহ সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়।

জানাগেছে, শহরের অন্তত ২০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দুই শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে।
কিশোর গ্যাং নামের বখাটেরা উক্ত পয়েন্ট সমুহে প্রতিদিন ভিড় করছে। তাদের উৎপাতের কারণে অনেক অভিভাবক উৎকন্ঠায় সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন না এবং ঈদের কেনাকাটার জন্য শহরে আসতেও ভয় বিরাজমান। আবার অনেক কিশোর গ্যাং আধিপাত্য বিস্তারে জড়িয়ে পড়ছে খুন খারাবিতে। তাদের দমনে প্রশাসন সক্রিয় থাকলেও শহরের কোথাও না কোথাও ঘটছে তাদের উৎপাতজনিত অপরাধ।

স্থানীয়রা জানান, শহরের টেকনাইপ্যা পাহাড় এলাকা, কলাতলির সুগন্ধা পয়েন্ট, জাম্বুর মোড়, সী ইন পয়েন্ট, লাবণি মোড়, হাসপাতাল সড়ক, পাহাড়তলী, বৈদ্যঘোনা, লাইটহাউজ এলাকা, বিজিবি ক্যাম্প এলাকা, বাস টার্মিনাল, চন্দ্রিমা এলাকায়, ঘোনার পাড়া, বাহারছড়া, নুর পাড়া, মহাজের পাড়া, কলাতলী ডলফিন মোড়, স্টেডিয়াম এলাকা, সাহিত্যিকা পল্লী, চেয়ারম্যান ঘাটা, বৈল্যাপাড়া, টেকপাড়া, কোর্টবিল্ডিং চত্বর, নুনিয়ারা ছড়া, পাহাড়তলী এলাকার অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিকরা সক্রিয় রয়েছে কিশোর গ্যাং এর আর্মস টিম এবং বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।

কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজনৈতিক নেতা এবং শহরের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বার বার আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে কক্সবাজার শহরকে অপরাধের স্বর্গরাজ্য হিসেবে গড়ে তুলেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়— দিনের বেলায় শহরের অভ্যন্তরের শিক্ষা প্রতিষ্টান কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জাব্বারিয়া একাডেমী, কক্সবাজার মডেল হাই স্কুল, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ, সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার ইসলামিয়া বালিকা মাদ্রাসার সম্মুখ এলাকা, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, কক্সবাজার সিটি কলেজ এলাকার সামনে, ভোলা বাবুর পেট্রোল পাস্প, গোলদিঘীর পাড়, বায়তুশ শরফ সড়ক, সিকদারমহল এলাকার একটি কোচিং সেন্টারের সামনে, কালুর দোকান ও বার্মিজ মার্কেট এলাকার প্রতিদিন বিভিন্ন ছদ্মবেশে নানা কৌশলে উৎপেতে থাকে কিশোর অপরাধি ও বখাটেরা। তারা স্কুল এবং কলেজ গামি ছাত্রীদের বিভিন্ন কৌশলে ইভটিজিং করছে। অনেক ছাত্রী লজ্জায় কিংবা বখাটেদের ভয়ে তা কাউকে জানাতে ও পারছেনা। অনেক কিশোর গ্যাং বিভিন্ন নাম ধারন করে ছদ্মবেশে সন্ধা হলেই শহরের নির্জন পয়েন্টে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে সক্রিয় হয়ে পড়ে।

তারা আসন্ন ঈদকে টার্গেট করে এসব টিম ভোরে এবং সন্ধ্যাা নামলেই মাঠে নামে বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে। কিশোর গ্যাং নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বৃদ্ধি পেয়েছে মারামারি, কিশোর অপরাধ। ফলে প্রতিদিনই অগোচরে পর্যটকসহ কারো না কারো মা, বোন, স্ত্রী অথবা মেয়ে লাঞ্চিত হচ্ছে তাদের হাতে।
কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রকিবুজ্জামান বলেন— শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সমুহে কিশোর গ্যাং এর উৎপাতরোধে আমাদের নিয়মিত নজরদারি রয়েছে। আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যাতে কক্সবাজার শহরকে অপরাধমুক্ত রাখা যায় এবং নির্বিঘ্নে বিভিন্ন এলাকা আসা ক্রেতা সাধারণ কেনাকাটা করতে পারে। আসন্ন ঈদুল ফিতরে এবং পহেলা বৈশাখকে ঘিরে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আলুর দাম আরও বেড়েছে, স্বস্তি নেই ডিম-সবজিতেও

কক্সবাজার শহরে কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব, আইনশৃঙ্খলার অবনতির শংকা

প্রকাশিত সময় : ০৩:৩৬:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে স্বাগত জানিয়ে কক্সবাজার শহরের অলিতে গলিতে বাণিজ্যিক মার্কেটে দিন দিন বাড়ছে কিশোর গ্যাং অপরাধী। এলাকা দাবড়ে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এরা কখনও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে, স্কুলগামী ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করছে, আবার কখনও বা বিভিন্ন স্পট থেকে ছিনতাই করছে। এদের কারণে কক্সবাজার শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
এই দিকে কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়িসহ জেলা প্রশাসন এসব কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করলে সাময়িক গা ডাকা দিলেও পূণরায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

কক্সবাজার শহরে ইদুল ফিতরের কেনাকাটা করতে আসা রামুর ইদ্রিস নাম এক ব্যক্তি জানান, তিনি বাজার ঘাটা এলাকায় সিএনজি হতে নেমে পান বাজার রোডে আসার পথে একদল কিশোর গ্যাং তাকে গতিরোধ করে হোটেল সী হার্টের পিছনের গলিতে নিয়ে গিয়ে তাকে মারধর করে এবং ছুরি দিয়ে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে নগদ টাকাসহ সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়।

জানাগেছে, শহরের অন্তত ২০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দুই শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে।
কিশোর গ্যাং নামের বখাটেরা উক্ত পয়েন্ট সমুহে প্রতিদিন ভিড় করছে। তাদের উৎপাতের কারণে অনেক অভিভাবক উৎকন্ঠায় সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন না এবং ঈদের কেনাকাটার জন্য শহরে আসতেও ভয় বিরাজমান। আবার অনেক কিশোর গ্যাং আধিপাত্য বিস্তারে জড়িয়ে পড়ছে খুন খারাবিতে। তাদের দমনে প্রশাসন সক্রিয় থাকলেও শহরের কোথাও না কোথাও ঘটছে তাদের উৎপাতজনিত অপরাধ।

স্থানীয়রা জানান, শহরের টেকনাইপ্যা পাহাড় এলাকা, কলাতলির সুগন্ধা পয়েন্ট, জাম্বুর মোড়, সী ইন পয়েন্ট, লাবণি মোড়, হাসপাতাল সড়ক, পাহাড়তলী, বৈদ্যঘোনা, লাইটহাউজ এলাকা, বিজিবি ক্যাম্প এলাকা, বাস টার্মিনাল, চন্দ্রিমা এলাকায়, ঘোনার পাড়া, বাহারছড়া, নুর পাড়া, মহাজের পাড়া, কলাতলী ডলফিন মোড়, স্টেডিয়াম এলাকা, সাহিত্যিকা পল্লী, চেয়ারম্যান ঘাটা, বৈল্যাপাড়া, টেকপাড়া, কোর্টবিল্ডিং চত্বর, নুনিয়ারা ছড়া, পাহাড়তলী এলাকার অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিকরা সক্রিয় রয়েছে কিশোর গ্যাং এর আর্মস টিম এবং বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।

কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজনৈতিক নেতা এবং শহরের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বার বার আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে কক্সবাজার শহরকে অপরাধের স্বর্গরাজ্য হিসেবে গড়ে তুলেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়— দিনের বেলায় শহরের অভ্যন্তরের শিক্ষা প্রতিষ্টান কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জাব্বারিয়া একাডেমী, কক্সবাজার মডেল হাই স্কুল, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ, সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার ইসলামিয়া বালিকা মাদ্রাসার সম্মুখ এলাকা, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, কক্সবাজার সিটি কলেজ এলাকার সামনে, ভোলা বাবুর পেট্রোল পাস্প, গোলদিঘীর পাড়, বায়তুশ শরফ সড়ক, সিকদারমহল এলাকার একটি কোচিং সেন্টারের সামনে, কালুর দোকান ও বার্মিজ মার্কেট এলাকার প্রতিদিন বিভিন্ন ছদ্মবেশে নানা কৌশলে উৎপেতে থাকে কিশোর অপরাধি ও বখাটেরা। তারা স্কুল এবং কলেজ গামি ছাত্রীদের বিভিন্ন কৌশলে ইভটিজিং করছে। অনেক ছাত্রী লজ্জায় কিংবা বখাটেদের ভয়ে তা কাউকে জানাতে ও পারছেনা। অনেক কিশোর গ্যাং বিভিন্ন নাম ধারন করে ছদ্মবেশে সন্ধা হলেই শহরের নির্জন পয়েন্টে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে সক্রিয় হয়ে পড়ে।

তারা আসন্ন ঈদকে টার্গেট করে এসব টিম ভোরে এবং সন্ধ্যাা নামলেই মাঠে নামে বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে। কিশোর গ্যাং নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বৃদ্ধি পেয়েছে মারামারি, কিশোর অপরাধ। ফলে প্রতিদিনই অগোচরে পর্যটকসহ কারো না কারো মা, বোন, স্ত্রী অথবা মেয়ে লাঞ্চিত হচ্ছে তাদের হাতে।
কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রকিবুজ্জামান বলেন— শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সমুহে কিশোর গ্যাং এর উৎপাতরোধে আমাদের নিয়মিত নজরদারি রয়েছে। আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যাতে কক্সবাজার শহরকে অপরাধমুক্ত রাখা যায় এবং নির্বিঘ্নে বিভিন্ন এলাকা আসা ক্রেতা সাধারণ কেনাকাটা করতে পারে। আসন্ন ঈদুল ফিতরে এবং পহেলা বৈশাখকে ঘিরে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।