কেপিআইভুক্ত কন্ট্রোলরুমে প্রবেশ করে সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুদ রানাকে পেটালেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর (সিসিক) রায়হান হোসেন ও তার সহযোগীরা।
শিলাবৃষ্টি ও ঝড়তুফান চলাকালে ১১ কেভি ফিডার ফল্টের কারণে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখায় তারা এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (৩১ মার্চ) রাতে দক্ষিণ সুরমা বড়ইকান্দি এলাকার বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩ কেপিআইভুক্ত কন্ট্রোলরুমে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় সোমবার (১ এপ্রিল) কাউন্সিলর রায়হান হোসেনকে প্রধান আসামি করে তিনজনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা দায়ের করেন সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩ সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুদ রানা।
মামলায় অভিযুক্ত অপর দুজন হলেন দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার কাজী বায়েজিদ আহমেদ ও শাহাদাত হোসেন রওজা।মামলার বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মো. ইয়ারদৌস হাসান। তিনি বলেন, ‘পুলিশ এরইমধ্যে মামলার তদন্ত কাজ শুরু করেছে।’
মামলার এজহারে সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টি ও ঝড়তুফান হয়। এতে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩, বিউবো, সিলেট দপ্তরের ১১ কেভি ফিডার ফল্টের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দপ্তরের আওতাধীন বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ লাইন সচল করার জন্য দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নির্দেশে সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানাসহ দপ্তরের সকল উপসহকারী প্রকৌশলী ও পালাবদলে কর্মরত কর্মচারীরা দপ্তরে উপস্থিত হন। ফিডার লাইন চালু করার জন্য মাসুদ রানাসহ উপসহকারী প্রকৌশলীরা দপ্তরের বড়ইকান্দি উপ-কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমে অবস্থান করছিলেন।
রাত দেড়টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রায়হান হোসেনসহ আরও দুইজন বিনা অনুমতিতে কেপিআইভুক্ত কন্ট্রোলরুমে প্রবেশ করে দুটি চালু ১১ কেভি ফিডার (১১ কেভি কদমতলী ও ১১ কেভি স্টেশন ফিডার) বন্ধ করতে এবং ১১ কেভি বড়ইকান্দি ফিডার চালু করতে চাপ দিতে থাকেন।
এ সময় সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা তাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করেন, কোনো ফিডার বন্ধ বা চালু করার জন্য সুনির্দিষ্ট কারণ প্রয়োজন। ফল্ট লাইন চালু করলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু এসব কথা না শুনে তারা সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানাকে হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন।
এক পর্যায়ে মাসুদ রানা বন্ধ হওয়া ১১ কেভি বরইকান্দি ফিডার জোরপূর্বক চালু করতে উদ্যত হয়। কিন্তু এতে মানুষের জীবন সংশয় ও নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের ফিডার চালু করা থেকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন। এতে কাউন্সিলর রায়হান হোসেনসহ তার দুই অনুসারী তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ শারীরিক আক্রমণ করেন।
এ ব্যাপারে সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, কাউন্সিলর ফল্টের কারণে বন্ধ হওয়া ১১ কেভি বড়ইকান্দি ফিডার জোরপূর্বক চালু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এভাবে এই ফিডার চালু করলে অনেক সমস্যা হবে। মানুষের জানমালের ক্ষতি হবে। তাই আমি তাকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি। কিন্তু তিন আমার কোনো কথা না শুনে আমার উপর আক্রমণ করেন। আমাকে জামার কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে কন্ট্রোল রুমের বাইরে নিয়ে যেতে যেতে বলতে থাকে এলাকা তাদের, তাদের কথাতেই সব কিছু হবে। আমাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে মেরে পার্শ্ববর্তী সুরমা নদীতে ফেলে দেবে। এ সময় উপস্থিত আমার সহকর্মীরা তাদের কোনোক্রমে নিবৃত করলে আমি প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু যাওয়ার সময় আমাকে হুমকি দিয়ে যায় অফিসের আশেপাশে পেলে আমাকে মেরে ফেলবে। এরপর তারা মোটরসাইকেলে স্থানীয় সন্ত্রাসী নিয়ে দপ্তরের সামনে অবস্থান করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সময় বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১, বিউবো, আম্বরখানা, সিলেট দপ্তরের আওতাধীন শেখঘাট ৩৩ কেভি ফিডারের ফন্ট মেরামতের জন্য আমার দপ্তরের ৩৩ কেভি বরইকান্দি ফিডার শাটডাউন নিলে সমগ্র অফিস প্রাঙ্গণ ও কন্ট্রোল রুম অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এতে তারা ভাবে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে লাইন বন্ধ করেছি এবং এজন্য তারা দ্বিতীয় দফায় এসে আমাকে গুম করে ফেলাসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়।’
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রায়হান হোসেন বলেন, ‘বক্তব্য নিতে হলে আমার সঙ্গে দেখা করেন। তাহলে আমি আমার ব্যাখ্যা দেব’।