০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজারে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন

কক্সবাজারে চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে কয়েকগুণ বেশি লোডশেডিং চলছে। এ অবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলা শহরসহ ৯ উপজেলার জনজীবন।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দু’একদিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে জানান তারা।
জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বায়ুর আদ্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সব বয়সী মানুষ। সেইসঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। গ্রাম কিংবা শহরে দিন—রাতের অধিকাংশ সময়ই চলছে বিদ্যুতের লুকোচুরি। এতে করে ঠিকমত সেচ পাম্পগুলো চালানো যাচ্ছে না। ফলে চলতি বোরো মৌসুমের ধানের আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের আওতাধীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ১নং ওয়ার্ডের সভাপতি জাফর আলম বলেন, বোরো ধান আমাদের প্রধান ফসল। এ সময়টা সব সময় জমিতে পানি রাখতে হয়। পানি না থাকলে ধানের সমস্যা হবে। কয়েক দিন ধরে কারেন্ট আসে আর যায়। পুরো দিনে এক বিঘা জমিতে পানি দেওয়া যায় না। এ নিয়ে অনেক চিন্তায় রয়েছে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে পবিত্র রমজান মাসে সেহেরী সময়ও লোডশেডিংয়ের তীব্রতা চোখে পড়ার মতো আর ইফতারের সময়টাতেও বিদ্যুৎতের ভিল্কি বাজিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে জনজীবন।

আরো বলেন, বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে আসবে সেই অপেক্ষা করতে হয়। খুব সমস্যা আছি।
এদিকে ঈদ ঘিরে জেলা—উপজেলার মার্কেট, ছোট—বড় শিল্প ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যস্ততা বেড়েছে। গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকলে ক্রেতারাও দোকানে যেতে চায় না। আবার ঈদ ঘিরে বিদ্যুৎ নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোও ঠিক সময়ে গ্রাহকদের কাঙ্খিত পণ্যও সরবরাহ করতে পারছেন না।
শহরের এ. সালাম মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, কি দিন আর কি রাত বিদ্যুৎ শুধু আসে আর যায়। ঈদের এই সময়টা ব্যবসার সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। এ সময়ে লোডশেডিংয় হওয়ায় বিপাকে পড়েছি।
শহরের বাজারঘাটা এলাকার জমজম মার্কেটের ব্যবসায়ী ফারুক বলেন, ঈদ ঘিরে অনেক মালামালের অর্ডার আছে। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে অধিকাংশ সময় অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। গ্রাহকদের মাল ডেলিভারি নিয়ে বিপাকে আছি।
বড় বাজারের মুদির দোকানীরা বলেন, একঘণ্টা দুইঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ আসে। এরপর আধাঘণ্টা থেকে আবার চলে যায়।
অন্যদিকে রোজার মধ্যে গরমের তীব্রতায় দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজারে ৩৭ থেকে ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রা বিরাজ করেছ। অতিরিক্ত গরমের কারণে প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলা কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। অবশ্য রাতে ঘরে ফিরেও স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে রাতেও ঘেমে ভিজে নাকাল হচ্ছে মানুষ।
রিক্সা চালক মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সূর্যে্যর অনেক তাপ। রোদে শরীর পুড়ে যায়। ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত আর বিকাল ৫টার পর থেকে গরম কিছুটা কম থাকে। সকাল ১০টার পর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রচণ্ড তাপদাহ থাকে। মনে হয় যেন চামড়া জ্বলে যাচ্ছে। শরীর ঘেমে যায়। শরীর দুর্বল হয়ে আসে। রিকশা চালাতে অনেক কষ্ট হয়।

শহরের টেকপাড়ার এডভোকেট শাফকাত শাহরিয়ার বলেন, বাতাসে যেন আগুন উড়ছে। প্রচণ্ড গরম। গরমের সঙ্গে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এই গরমে বাইরে যেমন বের হওয়া যাচ্ছে না, তেমনই ঘরেও অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে।
একদিকে সিয়াম সাধনার মাস অন্যদিকে তীব্র তাপদাহ। কর্মব্যস্ততা শেষে যে বাসায় ফিরে কোথায় স্বস্তিতে থাকব, সেখানে দিনে ও মধ্যরাতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।
কক্সবাজার (বিতরন বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) এর প্রকৌশলী আব্দুল কাদের গনি বলেন, এপ্রিলের শুরু থেকেই গরম বাড়ছে। সে কারণে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে আগের তুলনায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। তবে আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আলুর দাম আরও বেড়েছে, স্বস্তি নেই ডিম-সবজিতেও

কক্সবাজারে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন

প্রকাশিত সময় : ০২:২৫:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে কয়েকগুণ বেশি লোডশেডিং চলছে। এ অবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলা শহরসহ ৯ উপজেলার জনজীবন।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দু’একদিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে জানান তারা।
জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বায়ুর আদ্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সব বয়সী মানুষ। সেইসঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। গ্রাম কিংবা শহরে দিন—রাতের অধিকাংশ সময়ই চলছে বিদ্যুতের লুকোচুরি। এতে করে ঠিকমত সেচ পাম্পগুলো চালানো যাচ্ছে না। ফলে চলতি বোরো মৌসুমের ধানের আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের আওতাধীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ১নং ওয়ার্ডের সভাপতি জাফর আলম বলেন, বোরো ধান আমাদের প্রধান ফসল। এ সময়টা সব সময় জমিতে পানি রাখতে হয়। পানি না থাকলে ধানের সমস্যা হবে। কয়েক দিন ধরে কারেন্ট আসে আর যায়। পুরো দিনে এক বিঘা জমিতে পানি দেওয়া যায় না। এ নিয়ে অনেক চিন্তায় রয়েছে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে পবিত্র রমজান মাসে সেহেরী সময়ও লোডশেডিংয়ের তীব্রতা চোখে পড়ার মতো আর ইফতারের সময়টাতেও বিদ্যুৎতের ভিল্কি বাজিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে জনজীবন।

আরো বলেন, বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে আসবে সেই অপেক্ষা করতে হয়। খুব সমস্যা আছি।
এদিকে ঈদ ঘিরে জেলা—উপজেলার মার্কেট, ছোট—বড় শিল্প ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যস্ততা বেড়েছে। গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকলে ক্রেতারাও দোকানে যেতে চায় না। আবার ঈদ ঘিরে বিদ্যুৎ নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোও ঠিক সময়ে গ্রাহকদের কাঙ্খিত পণ্যও সরবরাহ করতে পারছেন না।
শহরের এ. সালাম মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, কি দিন আর কি রাত বিদ্যুৎ শুধু আসে আর যায়। ঈদের এই সময়টা ব্যবসার সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। এ সময়ে লোডশেডিংয় হওয়ায় বিপাকে পড়েছি।
শহরের বাজারঘাটা এলাকার জমজম মার্কেটের ব্যবসায়ী ফারুক বলেন, ঈদ ঘিরে অনেক মালামালের অর্ডার আছে। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে অধিকাংশ সময় অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। গ্রাহকদের মাল ডেলিভারি নিয়ে বিপাকে আছি।
বড় বাজারের মুদির দোকানীরা বলেন, একঘণ্টা দুইঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ আসে। এরপর আধাঘণ্টা থেকে আবার চলে যায়।
অন্যদিকে রোজার মধ্যে গরমের তীব্রতায় দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজারে ৩৭ থেকে ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রা বিরাজ করেছ। অতিরিক্ত গরমের কারণে প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলা কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। অবশ্য রাতে ঘরে ফিরেও স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে রাতেও ঘেমে ভিজে নাকাল হচ্ছে মানুষ।
রিক্সা চালক মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সূর্যে্যর অনেক তাপ। রোদে শরীর পুড়ে যায়। ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত আর বিকাল ৫টার পর থেকে গরম কিছুটা কম থাকে। সকাল ১০টার পর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রচণ্ড তাপদাহ থাকে। মনে হয় যেন চামড়া জ্বলে যাচ্ছে। শরীর ঘেমে যায়। শরীর দুর্বল হয়ে আসে। রিকশা চালাতে অনেক কষ্ট হয়।

শহরের টেকপাড়ার এডভোকেট শাফকাত শাহরিয়ার বলেন, বাতাসে যেন আগুন উড়ছে। প্রচণ্ড গরম। গরমের সঙ্গে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এই গরমে বাইরে যেমন বের হওয়া যাচ্ছে না, তেমনই ঘরেও অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে।
একদিকে সিয়াম সাধনার মাস অন্যদিকে তীব্র তাপদাহ। কর্মব্যস্ততা শেষে যে বাসায় ফিরে কোথায় স্বস্তিতে থাকব, সেখানে দিনে ও মধ্যরাতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।
কক্সবাজার (বিতরন বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) এর প্রকৌশলী আব্দুল কাদের গনি বলেন, এপ্রিলের শুরু থেকেই গরম বাড়ছে। সে কারণে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে আগের তুলনায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। তবে আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।