০৯:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যৌতুক আর স্বর্ণ দাবীতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসা হচ্ছে না সমাজের অসহায়দের

দেশের বাজারে আবার সোনার দাম বেড়েছে। সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দামে এক হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ টাকা। দেশের বাজারে এর আগে কখনো সোনার এত দাম হয়নি।

বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের প্রচলন অনুযায়ী  মুসলিম পরিবারের বিয়েতে স্বর্ণালংকার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যা এক কথায় বুঝায় দেনমোহর। সে তুলনায় স্বর্ণ দিতে না পারলেও, প্রয়োজন মোতাবেক নগদ অর্থ। যার কারণে বর্তমানে অনেক অসহায় পরিবারের ছেলেরা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারে না। আবার অনেক পরিবারে দেখা যায়, বর পক্ষের ১ ভরি দিতে হলে, কনে পক্ষে ১ ভরি দিতে হয়। কনে পক্ষ দিতে না পারলে তার সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে দিতে হয়। এতে বুঝা যায় যৌতুক। বর্তমান সমাজে যৌতুক ছাড়া কোন বিবাহই হচ্ছে না। বর্তমানে দিন দিন বৈশ্বিক দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতির কারণে এমনিতেই দেশের মানুষ অস্বস্তিতে রয়েছেন। তার মধ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। ভবিষ্যতে স্বর্ণের দাম এভাবেই দিন দিন বৃদ্ধি হতে থাকলে অনেক পরিবারে বিয়ের আসরে বসতে হবে না। অনেকেই স্বর্ণের বদলে রূপাকে বেচে নিচ্ছেন। যা দিয়ে মোটামুটি সামলিয়ে নিতে পারে। বাংলাদেশ সরকার যদি অসহায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোন ধরণের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, তাহলে যৌতুক দাবী অচিরেই উঠে যাবে এবং দেওয়া—নেওয়ার হিসাবই উল্টে যাবে। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।

সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। ৭ এপ্রিল রোববার থেকে উল্লেখিত দামে স্বর্ণ বিক্রি করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

এর আগে গত ২২ মার্চ ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম এক লাখ ১৪ হাজার ৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। এখন দাম বাড়ানোর মাধ্যমে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো।
শনিবার (৬ এপ্রিল) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দাম বেড়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশন সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে, যা ৭ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৬৯২ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ১০ হাজার ৫৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৪৫৮ টাকা বাড়িয়ে ৯৪ হাজার ৭৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ১৬৬ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার ৯৬৫ টাকা।
অবশ্য সোনার গয়না কিনতে ক্রেতাদের এর থেকে বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে সোনার গয়না বিক্রি করা হয়। একই সঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে আগামীকাল থেকে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার গয়না কিনতে ক্রেতাদের এক লাখ ২৫ হাজার ১১৪ টাকা গুনতে হবে।

এর আগে ২২ মার্চ থেকে সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৯১৬ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ১৪ হাজার ৭৪ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৭৪১ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৮ হাজার ৮৮৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়িয়ে ৯৩ হাজার ৩১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৯৮৩ টাকা বাড়িয়ে ৭৭ হাজার ৭৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ৬ এপ্রিল শনিবার পর্যন্ত এ দামেই সোনা বিক্রি হয়েছে।
এখন সোনার দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম এক হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম এক হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আলুর দাম আরও বেড়েছে, স্বস্তি নেই ডিম-সবজিতেও

যৌতুক আর স্বর্ণ দাবীতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসা হচ্ছে না সমাজের অসহায়দের

প্রকাশিত সময় : ০৩:২৯:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৪

দেশের বাজারে আবার সোনার দাম বেড়েছে। সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দামে এক হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ টাকা। দেশের বাজারে এর আগে কখনো সোনার এত দাম হয়নি।

বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের প্রচলন অনুযায়ী  মুসলিম পরিবারের বিয়েতে স্বর্ণালংকার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যা এক কথায় বুঝায় দেনমোহর। সে তুলনায় স্বর্ণ দিতে না পারলেও, প্রয়োজন মোতাবেক নগদ অর্থ। যার কারণে বর্তমানে অনেক অসহায় পরিবারের ছেলেরা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারে না। আবার অনেক পরিবারে দেখা যায়, বর পক্ষের ১ ভরি দিতে হলে, কনে পক্ষে ১ ভরি দিতে হয়। কনে পক্ষ দিতে না পারলে তার সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে দিতে হয়। এতে বুঝা যায় যৌতুক। বর্তমান সমাজে যৌতুক ছাড়া কোন বিবাহই হচ্ছে না। বর্তমানে দিন দিন বৈশ্বিক দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতির কারণে এমনিতেই দেশের মানুষ অস্বস্তিতে রয়েছেন। তার মধ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। ভবিষ্যতে স্বর্ণের দাম এভাবেই দিন দিন বৃদ্ধি হতে থাকলে অনেক পরিবারে বিয়ের আসরে বসতে হবে না। অনেকেই স্বর্ণের বদলে রূপাকে বেচে নিচ্ছেন। যা দিয়ে মোটামুটি সামলিয়ে নিতে পারে। বাংলাদেশ সরকার যদি অসহায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোন ধরণের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, তাহলে যৌতুক দাবী অচিরেই উঠে যাবে এবং দেওয়া—নেওয়ার হিসাবই উল্টে যাবে। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।

সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। ৭ এপ্রিল রোববার থেকে উল্লেখিত দামে স্বর্ণ বিক্রি করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

এর আগে গত ২২ মার্চ ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম এক লাখ ১৪ হাজার ৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। এখন দাম বাড়ানোর মাধ্যমে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো।
শনিবার (৬ এপ্রিল) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দাম বেড়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশন সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে, যা ৭ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৬৯২ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ১০ হাজার ৫৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৪৫৮ টাকা বাড়িয়ে ৯৪ হাজার ৭৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ১৬৬ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার ৯৬৫ টাকা।
অবশ্য সোনার গয়না কিনতে ক্রেতাদের এর থেকে বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে সোনার গয়না বিক্রি করা হয়। একই সঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে আগামীকাল থেকে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার গয়না কিনতে ক্রেতাদের এক লাখ ২৫ হাজার ১১৪ টাকা গুনতে হবে।

এর আগে ২২ মার্চ থেকে সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৯১৬ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ১৪ হাজার ৭৪ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৭৪১ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৮ হাজার ৮৮৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়িয়ে ৯৩ হাজার ৩১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৯৮৩ টাকা বাড়িয়ে ৭৭ হাজার ৭৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ৬ এপ্রিল শনিবার পর্যন্ত এ দামেই সোনা বিক্রি হয়েছে।
এখন সোনার দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম এক হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম এক হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।