০১:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হঠাৎ চাপে ইসরায়েল

গত প্রায় ছয় মাস ধরে গাজায় নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরায়েল। ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। কিন্তু হামলা থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এরই মধ্যে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এর আগে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় বারবার বলা হলেও ইসরায়েল কর্ণপাত করেনি। কিন্তু এবার একটি এনজিওর সাত কর্মী নিহতের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে নেতানিয়াহুর সরকার। কেবল বহির্বিশ্বে নয়, দেশের ভেতরেও ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়েছে তার সরকার।

যে কারণে চাপ

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহের সময় ইসরায়েলি বিমান হামলায় একটি দাতব্য সংস্থার সাত কর্মী নিহত হয় গত সপ্তাহে। ‘ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন’ নামক এনজিওর গাড়িতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। অস্ট্রেলিয়ান, ব্রিটিশ, ফিলিস্তিনি, পোলিশ এবং মার্কিন-কানাডিয়ান সাত জন কর্মীকে হত্যা করে। এতেই ক্ষুব্ধ হয় দেশগুলো। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের প্রতিষ্ঠাতা স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত ইউএস-ভিত্তিক সেলিব্রিটি শেফ জোসে আন্দ্রেসকে ফোন দিয়ে সমবেদনা জানান। আগে থেকেই হোসের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের। এরপর গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন নেতানিয়াহুকে ফোন করে কড়া হুমকি দেন। বাইডেন বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ইস্যুতে তার অবস্থান পালটাবে।

ত্রাণকর্মীদের মধ্যে ব্রিটিশ নাগরিক থাকায় ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে ব্যাপক চাপে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। লেবার পার্টিসহ তিনটি বিরোধী দল ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে। ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল এমপিদেরও অনেকে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত চেয়েছেন। এছাড়া দেশটির ৬০০ বিশিষ্টজনও একই দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া বাকি দেশগুলোও ইসরায়েলের কাছে এর জবাব চেয়েছে। তবে নেতানিয়াহু দুঃখ প্রকাশ করলেও বলেছেন, যুদ্ধের সময় এটা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হুমকি যে কাজে দিয়েছে তার প্রমাণ শুক্রবার গাজায় ত্রাণের একটি বহর প্রবেশের অনুমতি দেওয়া। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, কাজের মধ্য দিয়েই মানবিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ইসরায়েলকে প্রমাণ দিতে হবে।

নীতি বদলাবে ইসরায়েল!

গাজায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘আগে গুলি, পরে জিজ্ঞাসা।’ ইসরায়েলের এক সামরিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এর ফলেই এনজিওটির গাড়ি হামলার শিকার হয়েছে। তিনি সেনাদের দায়িত্বশীল আচরণের পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, এই পরিবর্তন না আসলে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করা কঠিন হবে। ফলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বললেই যে ইসরায়েল হামলা চালাবে না—তা বিশ্বাস করা যায় না। ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। শুক্রবার পাশ হওয়া এই প্রস্তাবে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

ইরানের হুমকি মোকাবিলা

শুক্রবার যে কোনো সময় ইরানের দিক থেকে হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলের ভেতরে বড় একটি অংশ জুড়ে জিপিএস সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েল তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করে। গত সপ্তাহে সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে মিসাইল হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হবার পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। সে হামলার পেছনে ইসরায়েল রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামলায় ইরানের একজন সিনিয়র জেনারেল নিহত হয়েছে।

ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস ঘোষণা দিয়েছে যে, সেনাবাহিনীতে যেসব সৈন্য কমব্যাট ইউনিটে রয়েছে তাদের সব ছুটি স্থগিত করা হয়। ইসরায়েল আশঙ্কা করছে ইরানের দিক থেকে হামলা অত্যাসন্ন। শুক্রবার হামলা করার কারণ এই দিনটিকে আল কুদস দিবস বা জেরুজালেম দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তাছাড়া এই দিনটি মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার, যেটি জুমাতুল বিদা হিসেবে পরিচিত। এই দিনটিতে ইরানে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ করা হয়। এদিকে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স দেশটির জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে, তারা যাতে ভীত হয়ে বাজার থেকে বেশি জিনিসপত্র ক্রয় না করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘এক্স’ প্ল্যাটফরমে আইডিএফ মুখপাত্র হাগারি লিখেছেন, জেনারেটর ও খাদ্য মজুত করার কোনো প্রয়োজন নেই। তাছাড়া এটিএম বুথ থেকে বেশি অর্থ তোলার প্রয়োজন নেই। ইসরায়েলের বিভিন্ন গণমাধ্যম রিপোর্ট করেছে যে, ইরানের হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলের বিভিন্ন দূতাবাসকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে অথবা খালি করা হয়েছে। তবে বিষয়টির সত্যতা বিবিসি নিশ্চিত করতে পারেনি।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আলুর দাম আরও বেড়েছে, স্বস্তি নেই ডিম-সবজিতেও

হঠাৎ চাপে ইসরায়েল

প্রকাশিত সময় : ১০:৩০:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৪

গত প্রায় ছয় মাস ধরে গাজায় নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরায়েল। ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। কিন্তু হামলা থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এরই মধ্যে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এর আগে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় বারবার বলা হলেও ইসরায়েল কর্ণপাত করেনি। কিন্তু এবার একটি এনজিওর সাত কর্মী নিহতের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে নেতানিয়াহুর সরকার। কেবল বহির্বিশ্বে নয়, দেশের ভেতরেও ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়েছে তার সরকার।

যে কারণে চাপ

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহের সময় ইসরায়েলি বিমান হামলায় একটি দাতব্য সংস্থার সাত কর্মী নিহত হয় গত সপ্তাহে। ‘ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন’ নামক এনজিওর গাড়িতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। অস্ট্রেলিয়ান, ব্রিটিশ, ফিলিস্তিনি, পোলিশ এবং মার্কিন-কানাডিয়ান সাত জন কর্মীকে হত্যা করে। এতেই ক্ষুব্ধ হয় দেশগুলো। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের প্রতিষ্ঠাতা স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত ইউএস-ভিত্তিক সেলিব্রিটি শেফ জোসে আন্দ্রেসকে ফোন দিয়ে সমবেদনা জানান। আগে থেকেই হোসের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের। এরপর গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন নেতানিয়াহুকে ফোন করে কড়া হুমকি দেন। বাইডেন বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ইস্যুতে তার অবস্থান পালটাবে।

ত্রাণকর্মীদের মধ্যে ব্রিটিশ নাগরিক থাকায় ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে ব্যাপক চাপে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। লেবার পার্টিসহ তিনটি বিরোধী দল ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে। ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল এমপিদেরও অনেকে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত চেয়েছেন। এছাড়া দেশটির ৬০০ বিশিষ্টজনও একই দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া বাকি দেশগুলোও ইসরায়েলের কাছে এর জবাব চেয়েছে। তবে নেতানিয়াহু দুঃখ প্রকাশ করলেও বলেছেন, যুদ্ধের সময় এটা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হুমকি যে কাজে দিয়েছে তার প্রমাণ শুক্রবার গাজায় ত্রাণের একটি বহর প্রবেশের অনুমতি দেওয়া। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, কাজের মধ্য দিয়েই মানবিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ইসরায়েলকে প্রমাণ দিতে হবে।

নীতি বদলাবে ইসরায়েল!

গাজায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘আগে গুলি, পরে জিজ্ঞাসা।’ ইসরায়েলের এক সামরিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এর ফলেই এনজিওটির গাড়ি হামলার শিকার হয়েছে। তিনি সেনাদের দায়িত্বশীল আচরণের পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, এই পরিবর্তন না আসলে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করা কঠিন হবে। ফলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বললেই যে ইসরায়েল হামলা চালাবে না—তা বিশ্বাস করা যায় না। ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। শুক্রবার পাশ হওয়া এই প্রস্তাবে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

ইরানের হুমকি মোকাবিলা

শুক্রবার যে কোনো সময় ইরানের দিক থেকে হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলের ভেতরে বড় একটি অংশ জুড়ে জিপিএস সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েল তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করে। গত সপ্তাহে সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে মিসাইল হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হবার পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। সে হামলার পেছনে ইসরায়েল রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামলায় ইরানের একজন সিনিয়র জেনারেল নিহত হয়েছে।

ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস ঘোষণা দিয়েছে যে, সেনাবাহিনীতে যেসব সৈন্য কমব্যাট ইউনিটে রয়েছে তাদের সব ছুটি স্থগিত করা হয়। ইসরায়েল আশঙ্কা করছে ইরানের দিক থেকে হামলা অত্যাসন্ন। শুক্রবার হামলা করার কারণ এই দিনটিকে আল কুদস দিবস বা জেরুজালেম দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তাছাড়া এই দিনটি মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার, যেটি জুমাতুল বিদা হিসেবে পরিচিত। এই দিনটিতে ইরানে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ করা হয়। এদিকে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স দেশটির জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে, তারা যাতে ভীত হয়ে বাজার থেকে বেশি জিনিসপত্র ক্রয় না করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘এক্স’ প্ল্যাটফরমে আইডিএফ মুখপাত্র হাগারি লিখেছেন, জেনারেটর ও খাদ্য মজুত করার কোনো প্রয়োজন নেই। তাছাড়া এটিএম বুথ থেকে বেশি অর্থ তোলার প্রয়োজন নেই। ইসরায়েলের বিভিন্ন গণমাধ্যম রিপোর্ট করেছে যে, ইরানের হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলের বিভিন্ন দূতাবাসকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে অথবা খালি করা হয়েছে। তবে বিষয়টির সত্যতা বিবিসি নিশ্চিত করতে পারেনি।