প্রায় ছয় মাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বর্বর হামলা চালিয়ে আসছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। উপত্যকাটির নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের নামে গাজাজুড়ে হামলা চালালেও, নিজেদের লক্ষ্যে খুব একটা সাফল্য পায়নি ইসরায়েল। বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি ফিলিস্তিনিদের মনোবল। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোববার (৭ এপ্রিল) দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহর থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেয় নেতানিয়াহু প্রশাসন।
এদিকে, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরপরই বীরের বেশে শহরটিতে ফিরতে শুরু করেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। ধ্বংস হওয়া বাড়িঘরেই আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। সোমবার (৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
কয়েক মাস ধরে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে স্থল অভিযান চালিয়ে আসছিল ইসরায়েলি বাহিনী। তবে রোববার (৭ এপ্রিল) ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেন।
জানা গেছে, মিশর সীমান্তবর্তী দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরসহ অন্য স্থানে অভিযানের প্রস্তুতির জন্যই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হাভেলি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সেনা সরিয়ে নেওয়া মানে অভিযান বন্ধ এমনটি বলার সুযোগ নেই। তবে গাজায় ইসরায়েলের উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয়েছে।
খান ইউনিসে ফিরে বার্তা সংস্থা এএফপিকে মাহা তাহের নামের তিন সন্তানের এক মা বলেন, চারদিকে লাশের গন্ধ পাচ্ছি। আমাদের শহর আর আগের মতো নেই। এখন এটি শুধুই ধ্বংসস্তূপ। রাস্তা দিয়ে যখন হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন আমি কান্না ধরে রাখতে পারছিলাম না।
তিনি বলেন, প্রতিটি বাড়িতে বুলডোজার চালানো হয়েছে। এমনকি, আমি মানুষজনকে মাটি খুঁড়ে মরদেহ বের করতেও দেখেছি। এ এক অসহনীয় পরিস্থিতি।
গত ৭ অক্টোবরের আগে খান ইউনিসে চার লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করত। কয়েক মাসের ইসরাইলের লাগাতার বোমা হামলা ও হামাস সদস্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে শহরটির অধিকাংশ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গত প্রায় ছয় মাসে এক লাখেরও বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন। জানা গেছে, ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৭৬ হাজার।
এদিকে, গাজায় হামলার পাশাপাশি সেখানে ত্রাণ সরবরাহেও বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় বসবাসরত ২২ লাখ ফিলিস্তিনি ভয়াবহ খাদ্যসংকটে পড়েছে। খাবার-পানির অভাবে উপত্যকাটিতে মানুষের মৃত্যুও শুরু হয়েছে।