০৯:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মে

কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেট রাখাইন ব্যবসায়ীদের হতাশা

দিন দিন ঐতিহ্য হারাচ্ছে পর্যটন শহর কক্সবাজারের ঐতিহ্যেবাহি বার্মিজ মার্কেট। ধীরে ধীরে এই ব্যবসাটি রাখাইনদের হাত থেকে চলে যাচ্ছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে বার্মিজ দোকানগুলো চালু থাকলেও মূলত এর কর্তৃত্ব অধিকাংশই চলে গেছে ভিন্ন লোকদের দখলে। এতে করে চরম হতাশা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত রাখাইনদের মাঝে।

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আর শহরের বিভিন্ন পর্যটক স্পষ্টে বার্মিজ মার্কেট নাম ব্যবহার করে ভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা শো-রুম/মার্কেট চালু করায় রাখাইন ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারাচ্ছে বলে জানান একাধিক রাখাইন ব্যবসায়ী।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকালে ও শুক্রবার সকালে শহরের বেশ কয়েকটি বার্মিজ মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বার্মিজ মার্কেটের দোকানগুলোতে রাখাইন নারীরা থাকলেও অধিকাংশই কর্মচারী হিসেবে চাকরি করছে অন্য লোকদের দোকানে। বর্তমানে বলতে গেলে বার্মিজ মার্কেট নামক শব্দের নামটা সাইনবোর্ডেই ঝুলে আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রাখাইন নেতা জানান, বর্তমানে প্রাচীনতম বার্মিজ মার্কেট গুলোতে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে এগুলো।

বার্মিজ মার্কেট নাম ব্যবহার করে অনেকে আচার, আবার অনেকে ঝিনুকের দোকান খুলে বসে আছে। শহরের বার্মিজ মার্কেট এলাকায় দেখা যায় বেশিরভাগ দোকান শুটঁকি মাছের, অলিতে গলিতে এখন ব্যাঙের ছাতার মতো শুঁটকির দোকান গড়ে উঠেছে। শুটকি মাছের গন্ধে, আগত পর্যটক ও স্থানীয় পথচারীরা নাক বন্ধ করে চলাফেরা করে।

খবর নিয়ে জানা যায়-১৯৬৬ সালের দিকে উমে রাখাইন নামে কক্সবাজার শহরের এক জমিদার রাখাইন তরুণী সর্বপ্রথম বার্মা থেকে কিছু পণ্য এনে একটা কাঠের দোকান ঘর তৈরি করে বার্মিজ পণ্যের ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে রাখাইন ষ্টোর ও ডায়মন্ড স্টোর নামে আরো দুটি বার্মিজ দোকান করেন আরো দুই রাখাইন। ১৯৮১ সালের শেষের দিকে এসে উমে রাখাইন টিন ও কাঠ দিয়ে ৭/৮টি দোকান দিয়ে মার্কেট চালু করেন। পরবর্তী ১৯৮৫ সালে এসে পরিপূর্ণ একটি বার্মিজ মার্কেট ‘উমে বার্মিজ মার্কেট’ নামে এর যাত্রা শুরু হয়।

কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী প্রথম উমে বার্মিজ মার্কেটের স্বতাধিকারী উমে রাখাইনের ছেলে বুবু রাখাইন বলেন, কক্সবাজার তথা বাংলাদেশে সর্ব প্রথম আমার মা, বার্মিজ স্টোরের ব্যবসা শুরু করেন। আমার মা একজন নারী উদ্যোক্তা ও সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সরকারি, বেসরকারি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।

২০২২ সালের ২৬ মে, ৯২ বছর বয়সে উমে রাখাইন মারা যায়। তিনি আরো বলেন, এখন অহরহ বার্মিজ মার্কেট নামে হরেক রকম ব্যাবসা চলছে। রাখাইন ব্যবসায়ীরা পুঁজির অভাবে এখন দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। দেখেন আমাদের মার্কেটে মাত্র ১৩টি দোকান চালু রয়েছে। বাকি ব্যাবসায়ীরা লোকসান দিতে দিতে এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে।

উমে বার্মিজ মার্কেটের পুরাতন রাখাইন ব্যবসায়ী চেন চেন রাখাইন বলেন, বার্মিজ মার্কেটে এখন আর তেমন পর্যটক আসেনা বেচা বিক্রিও আগের মত নেই। প্রতিযোগিতামূলক বাজার। নতুন নতুন মার্কেট গড়ে উঠছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে, বেশি বেশি টাকা সালামী দিয়ে সব দোকান তাদের দখলে নিয়ে গেছে। এতে করে আমরা তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করতে পারছি না।

দুবাই বুড়ি মার্কেটের পুরাতন ব্যবসায়ী মেমে রাখাইন বলেন, রাখাইন সম্প্রদায়ের মেয়েরা এখন আর এই ব্যবসায় আসতে চাচ্ছে না। কম টাকায় উপজাতি মেয়েরা চাকরি করতে চাই না আবার আমাদের মূলধনও কম। সরকার বা এনজিও গুলো আমাদের ক্ষুদ্র ঋণ, সুদ মুক্ত ঋণ বা যে কোন প্রজেক্ট নিয়ে এগিয়ে আসলে আমরা আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারতাম বলে মনে করি।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ড্রষ্টীর সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন- যুগের সাথে তালমিলিয়ে চলতে পারছেনা রাখাইনরা। নিত্য নতুন পণ্য ও প্রচারের যোগে তাদের আপডেট হওয়া দরকার। আমরাও চেষ্টা করছি তাদের ডেভেলাপ করার জন্য। রাখাইনদের হাতের তৈরি জিনিস পত্র নিয়ে আমরা তাদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য চেম্বার অফ কমার্স একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নেবে।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আলুর দাম আরও বেড়েছে, স্বস্তি নেই ডিম-সবজিতেও

সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মে

কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেট রাখাইন ব্যবসায়ীদের হতাশা

প্রকাশিত সময় : ১০:৩৬:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মে ২০২৪

দিন দিন ঐতিহ্য হারাচ্ছে পর্যটন শহর কক্সবাজারের ঐতিহ্যেবাহি বার্মিজ মার্কেট। ধীরে ধীরে এই ব্যবসাটি রাখাইনদের হাত থেকে চলে যাচ্ছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে বার্মিজ দোকানগুলো চালু থাকলেও মূলত এর কর্তৃত্ব অধিকাংশই চলে গেছে ভিন্ন লোকদের দখলে। এতে করে চরম হতাশা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত রাখাইনদের মাঝে।

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আর শহরের বিভিন্ন পর্যটক স্পষ্টে বার্মিজ মার্কেট নাম ব্যবহার করে ভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা শো-রুম/মার্কেট চালু করায় রাখাইন ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারাচ্ছে বলে জানান একাধিক রাখাইন ব্যবসায়ী।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকালে ও শুক্রবার সকালে শহরের বেশ কয়েকটি বার্মিজ মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বার্মিজ মার্কেটের দোকানগুলোতে রাখাইন নারীরা থাকলেও অধিকাংশই কর্মচারী হিসেবে চাকরি করছে অন্য লোকদের দোকানে। বর্তমানে বলতে গেলে বার্মিজ মার্কেট নামক শব্দের নামটা সাইনবোর্ডেই ঝুলে আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রাখাইন নেতা জানান, বর্তমানে প্রাচীনতম বার্মিজ মার্কেট গুলোতে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে এগুলো।

বার্মিজ মার্কেট নাম ব্যবহার করে অনেকে আচার, আবার অনেকে ঝিনুকের দোকান খুলে বসে আছে। শহরের বার্মিজ মার্কেট এলাকায় দেখা যায় বেশিরভাগ দোকান শুটঁকি মাছের, অলিতে গলিতে এখন ব্যাঙের ছাতার মতো শুঁটকির দোকান গড়ে উঠেছে। শুটকি মাছের গন্ধে, আগত পর্যটক ও স্থানীয় পথচারীরা নাক বন্ধ করে চলাফেরা করে।

খবর নিয়ে জানা যায়-১৯৬৬ সালের দিকে উমে রাখাইন নামে কক্সবাজার শহরের এক জমিদার রাখাইন তরুণী সর্বপ্রথম বার্মা থেকে কিছু পণ্য এনে একটা কাঠের দোকান ঘর তৈরি করে বার্মিজ পণ্যের ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে রাখাইন ষ্টোর ও ডায়মন্ড স্টোর নামে আরো দুটি বার্মিজ দোকান করেন আরো দুই রাখাইন। ১৯৮১ সালের শেষের দিকে এসে উমে রাখাইন টিন ও কাঠ দিয়ে ৭/৮টি দোকান দিয়ে মার্কেট চালু করেন। পরবর্তী ১৯৮৫ সালে এসে পরিপূর্ণ একটি বার্মিজ মার্কেট ‘উমে বার্মিজ মার্কেট’ নামে এর যাত্রা শুরু হয়।

কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী প্রথম উমে বার্মিজ মার্কেটের স্বতাধিকারী উমে রাখাইনের ছেলে বুবু রাখাইন বলেন, কক্সবাজার তথা বাংলাদেশে সর্ব প্রথম আমার মা, বার্মিজ স্টোরের ব্যবসা শুরু করেন। আমার মা একজন নারী উদ্যোক্তা ও সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সরকারি, বেসরকারি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।

২০২২ সালের ২৬ মে, ৯২ বছর বয়সে উমে রাখাইন মারা যায়। তিনি আরো বলেন, এখন অহরহ বার্মিজ মার্কেট নামে হরেক রকম ব্যাবসা চলছে। রাখাইন ব্যবসায়ীরা পুঁজির অভাবে এখন দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। দেখেন আমাদের মার্কেটে মাত্র ১৩টি দোকান চালু রয়েছে। বাকি ব্যাবসায়ীরা লোকসান দিতে দিতে এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে।

উমে বার্মিজ মার্কেটের পুরাতন রাখাইন ব্যবসায়ী চেন চেন রাখাইন বলেন, বার্মিজ মার্কেটে এখন আর তেমন পর্যটক আসেনা বেচা বিক্রিও আগের মত নেই। প্রতিযোগিতামূলক বাজার। নতুন নতুন মার্কেট গড়ে উঠছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে, বেশি বেশি টাকা সালামী দিয়ে সব দোকান তাদের দখলে নিয়ে গেছে। এতে করে আমরা তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করতে পারছি না।

দুবাই বুড়ি মার্কেটের পুরাতন ব্যবসায়ী মেমে রাখাইন বলেন, রাখাইন সম্প্রদায়ের মেয়েরা এখন আর এই ব্যবসায় আসতে চাচ্ছে না। কম টাকায় উপজাতি মেয়েরা চাকরি করতে চাই না আবার আমাদের মূলধনও কম। সরকার বা এনজিও গুলো আমাদের ক্ষুদ্র ঋণ, সুদ মুক্ত ঋণ বা যে কোন প্রজেক্ট নিয়ে এগিয়ে আসলে আমরা আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারতাম বলে মনে করি।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ড্রষ্টীর সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন- যুগের সাথে তালমিলিয়ে চলতে পারছেনা রাখাইনরা। নিত্য নতুন পণ্য ও প্রচারের যোগে তাদের আপডেট হওয়া দরকার। আমরাও চেষ্টা করছি তাদের ডেভেলাপ করার জন্য। রাখাইনদের হাতের তৈরি জিনিস পত্র নিয়ে আমরা তাদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য চেম্বার অফ কমার্স একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নেবে।