১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৈকতে মূর্তিমান আতঙ্ক অর্ধডজন বিচকর্মী

কক্সবাজারে ঘুরতে আসা পর্যটরা সমুদ্র সৈকতে পর্যটক প্রবেশ করেন মূলত কলাতলি, সুগন্ধা কিংবা লাবনী পয়েন্ট হয়ে। আরা এসব পয়েন্টের মাঝে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় সুগন্ধা পয়েন্ট। সুগন্ধা পয়েন্ট দিয়ে সৈকতের দিয়ে প্রবেশ করতেই সড়কের পাশে ফিসফ্রাইসহ নানা অস্বাস্থ্যকর খাবারের সারি সারি ভ্যান। আর এসব ভ্যান থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করেন বিচকর্মীরা।

চাঁদাবাজি, ব্যবসায়ীদের হয়রানিসহ নানা ধরনের গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দায়িত্বে থাকা বিচকর্মীরা। তাদের হাত থেকে পর্যটক কিংবা স্থানীয় ব্যবসায়ী কেউ রেহাই পাচ্ছেন না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা। কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির অধীনে থাকা এসব বিচকর্মী দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বিচকর্মীরা প্রতি মাসে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, মাসের পর মাস চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফুটপাতের হকারেরা। ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা নিজেদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের কাছে বিচকর্মীরা আতঙ্কের নাম। কেউ অভিযোগ করলেও রয়েছে বিপদ। অনেকে অভিযোগ করে উল্টো জেল-জরিমানার শিকার হয়েছেন।

সৈকতের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সমুদ্র সৈকতে আসলে তাদের দায়িত্ব কী তা কেউ জানে না। তারা শুধু চাঁদাবাজিতেই ব্যস্ত থাকেন। সাগরে চলমান ওয়াটার বাইক থেকে দৈনিক ২০০ টাকা, সুগন্ধা সড়কের উপরে বসা ফিসফ্রাইয়ের ভ্যান থেকে প্রতিটি ভ্যান থেকে দৈনিক ২/৩শত টাকা, জনপ্রতি ফটোগ্রাফার থেকে দৈনিক ১০০ টাকা করে আদায় করে এছাড়াও ঝালমুড়ি বিক্রেতার কাছ থেকে দৈনিক ৫০/১০০ টাকা, কপি বিক্রেতার কাছ থেকে দৈনিক ১০০ টাকা হারে , বাদাম বিক্রেতার কাছ থেকে দৈনিক ২০ /৫০ টাকা হ, কলা বিক্রেতার কাছ থেকে ৫০/১০০ টাকা জনপ্রতি, ঘোড়া চালকের কাছ থেকে ১০০ টাকা এবং প্রায় ১০০ জন চিপস, পানি সিগারেটসহ অন্য হকারের কাছ থেকে ২০ টাকা হারে ২০০০ টাকা দৈনিক চাঁদাবাজি করেন বিচকর্মীরা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বিচকর্মীদের মধ্যে বেলাল উদ্দিন, শফিউল করিম, তৌহিদ, রিপন ও জাহেদ সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া। তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বেশি খারাপ আচরণ করেন। পর্যটকদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। এমনকি শফিউল করিমকে চাহিদা মতো চাঁদার টাকা দিতে না পারায় চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি এক ফটোগ্রাফার উপর বিচকর্মী শফিউল করিমের নেতৃত্বে বিচকর্মী জাহেদ,আমির হোসেনসহ কয়েকজন মিলে মোঃ হাসেম নামক এক ফটোগ্রাফারকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এমনকি তার ব্যবহারিত ক্যামরাও নিয়ে যায় বলে জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মোঃ হাসেম।

নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠলেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় উক্ত সিন্ডিকেট আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে মনে করেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে পরবর্তীতে ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল ও সৈকতে ব্যবসা করতে দেবে না বলে হুমকি দেওয়ার কারণে নিরবে বিচকর্মীদের চাঁদাবাজি হয়রানি সহ্য করে যাচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসীরা এমনটাই জানিয়েছেন সমুদ্র সৈকতে ব্যবসা করা একাধিক ব্যবসায়ী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফিসফ্রাই ব্যবসায়ী বলেন, রাস্তার পাশে ভ্যানের উপর ফিসফ্রাইয়ের ব্যবসা করে জীবন যাপন করে যাচ্ছি। কিন্তু বিচকর্মী বেলাল ও তৌহিদের নেতৃত্বে প্রতিদিন নানা ভাবে হয়রানি ও মাসোহারার শিকার হতে যাচ্ছে। তাদের দৈনিক টাকা না দিলে কয়েক দিন পর পর নানা অজুহাতে প্রশাসনের অভিযানে পড়তে হয়। যার ফলে কয়েক দিন দোকান বন্ধ করে চোরের মতো খুলতে হয় আবার পালাতে হয়। অভিযুক্ত এক বিচকর্মী দাবি করেন, তিনি এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যে দিক নির্দেশনা দেন তা বাস্তবায়ন করতে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করেন বলে জানান।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজেস্ট্রেট (এডিএম) ইয়ামিন হোসেন বলেন, কোন বিচকর্মীর এরকম অন্যায়ের ব্যাপারে আমাদের কেউ অভিযোগ করেনি। তবে কেউ যদি অভিযোগ করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আলুর দাম আরও বেড়েছে, স্বস্তি নেই ডিম-সবজিতেও

সৈকতে মূর্তিমান আতঙ্ক অর্ধডজন বিচকর্মী

প্রকাশিত সময় : ০৯:০৮:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪

কক্সবাজারে ঘুরতে আসা পর্যটরা সমুদ্র সৈকতে পর্যটক প্রবেশ করেন মূলত কলাতলি, সুগন্ধা কিংবা লাবনী পয়েন্ট হয়ে। আরা এসব পয়েন্টের মাঝে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় সুগন্ধা পয়েন্ট। সুগন্ধা পয়েন্ট দিয়ে সৈকতের দিয়ে প্রবেশ করতেই সড়কের পাশে ফিসফ্রাইসহ নানা অস্বাস্থ্যকর খাবারের সারি সারি ভ্যান। আর এসব ভ্যান থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করেন বিচকর্মীরা।

চাঁদাবাজি, ব্যবসায়ীদের হয়রানিসহ নানা ধরনের গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দায়িত্বে থাকা বিচকর্মীরা। তাদের হাত থেকে পর্যটক কিংবা স্থানীয় ব্যবসায়ী কেউ রেহাই পাচ্ছেন না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা। কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির অধীনে থাকা এসব বিচকর্মী দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বিচকর্মীরা প্রতি মাসে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, মাসের পর মাস চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফুটপাতের হকারেরা। ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা নিজেদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের কাছে বিচকর্মীরা আতঙ্কের নাম। কেউ অভিযোগ করলেও রয়েছে বিপদ। অনেকে অভিযোগ করে উল্টো জেল-জরিমানার শিকার হয়েছেন।

সৈকতের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সমুদ্র সৈকতে আসলে তাদের দায়িত্ব কী তা কেউ জানে না। তারা শুধু চাঁদাবাজিতেই ব্যস্ত থাকেন। সাগরে চলমান ওয়াটার বাইক থেকে দৈনিক ২০০ টাকা, সুগন্ধা সড়কের উপরে বসা ফিসফ্রাইয়ের ভ্যান থেকে প্রতিটি ভ্যান থেকে দৈনিক ২/৩শত টাকা, জনপ্রতি ফটোগ্রাফার থেকে দৈনিক ১০০ টাকা করে আদায় করে এছাড়াও ঝালমুড়ি বিক্রেতার কাছ থেকে দৈনিক ৫০/১০০ টাকা, কপি বিক্রেতার কাছ থেকে দৈনিক ১০০ টাকা হারে , বাদাম বিক্রেতার কাছ থেকে দৈনিক ২০ /৫০ টাকা হ, কলা বিক্রেতার কাছ থেকে ৫০/১০০ টাকা জনপ্রতি, ঘোড়া চালকের কাছ থেকে ১০০ টাকা এবং প্রায় ১০০ জন চিপস, পানি সিগারেটসহ অন্য হকারের কাছ থেকে ২০ টাকা হারে ২০০০ টাকা দৈনিক চাঁদাবাজি করেন বিচকর্মীরা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বিচকর্মীদের মধ্যে বেলাল উদ্দিন, শফিউল করিম, তৌহিদ, রিপন ও জাহেদ সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া। তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বেশি খারাপ আচরণ করেন। পর্যটকদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। এমনকি শফিউল করিমকে চাহিদা মতো চাঁদার টাকা দিতে না পারায় চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি এক ফটোগ্রাফার উপর বিচকর্মী শফিউল করিমের নেতৃত্বে বিচকর্মী জাহেদ,আমির হোসেনসহ কয়েকজন মিলে মোঃ হাসেম নামক এক ফটোগ্রাফারকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এমনকি তার ব্যবহারিত ক্যামরাও নিয়ে যায় বলে জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মোঃ হাসেম।

নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠলেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় উক্ত সিন্ডিকেট আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে মনে করেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে পরবর্তীতে ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল ও সৈকতে ব্যবসা করতে দেবে না বলে হুমকি দেওয়ার কারণে নিরবে বিচকর্মীদের চাঁদাবাজি হয়রানি সহ্য করে যাচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসীরা এমনটাই জানিয়েছেন সমুদ্র সৈকতে ব্যবসা করা একাধিক ব্যবসায়ী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফিসফ্রাই ব্যবসায়ী বলেন, রাস্তার পাশে ভ্যানের উপর ফিসফ্রাইয়ের ব্যবসা করে জীবন যাপন করে যাচ্ছি। কিন্তু বিচকর্মী বেলাল ও তৌহিদের নেতৃত্বে প্রতিদিন নানা ভাবে হয়রানি ও মাসোহারার শিকার হতে যাচ্ছে। তাদের দৈনিক টাকা না দিলে কয়েক দিন পর পর নানা অজুহাতে প্রশাসনের অভিযানে পড়তে হয়। যার ফলে কয়েক দিন দোকান বন্ধ করে চোরের মতো খুলতে হয় আবার পালাতে হয়। অভিযুক্ত এক বিচকর্মী দাবি করেন, তিনি এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যে দিক নির্দেশনা দেন তা বাস্তবায়ন করতে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করেন বলে জানান।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজেস্ট্রেট (এডিএম) ইয়ামিন হোসেন বলেন, কোন বিচকর্মীর এরকম অন্যায়ের ব্যাপারে আমাদের কেউ অভিযোগ করেনি। তবে কেউ যদি অভিযোগ করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।