০২:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জনগণ বলছে: কাউন্সিলর জাহেদা জালিয়াতি করে অনেকদিন খেয়েছেন, আর কতো খাবেন?

কাউন্সিলর জাহেদা ও পিএস মুফিজের আশীর্বাদে রোহিঙ্গারা পাচ্ছে কক্সবাজার পৌরসভার সনদ

কক্সবাজার পৌরসভায় আবারও দলাল চক্রের দৌরাত্ম বেড়েছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে গড়ে উঠেছে কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। পৌরসভায় জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়ার দায়িত্ব নেন এসব চক্র। দালালদের মাধ্যমে নানা কৌশলে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে রোহিঙ্গারা। আর এতে জড়িত পৌরসভার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা—কর্মচারী ও প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি। জানা যায়, পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে উৎপেতে থাকে এসব দালাল চক্র। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত টাকা নিয়ে তারা ভোটার বানাতে নানা অপতৎপরতা শুরু চালায়। জন্মসনদের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দালাল চক্রের সদস্যরাই ম্যানেজ করে দেন। জনপ্রতিনিধিরা তাদের প্রকৃত নাগরিকের স্বীকৃতি দেওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এভাবে লাখ টাকার বিনিময়ে জন্মনিবন্ধন সনদ কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছে রোহিঙ্গারা। গত বুধবার (৫ জুন) দালালের মাধ্যমে ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে ভোটার হতে এসে স্থানীয় কাউন্সিলরের হাতে আটক হয় জাহেদ উল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা যুবক। আটক হওয়ার পর ওই রোহিঙ্গা যুবক জানান দালাল চক্রের পরিচয়। জানতে চাইলে রোহিঙ্গা যুবক জাহেদ উল্লাহ বলেন, ‘বিদেশ যাওয়ার জন্য ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশী দালালের মাধ্যমে ভোটার হতে চেয়েছিলাম। এ জন্য দালাল চক্রের কাছে নগদ ১ লক্ষ টাকার প্রদান করা হয়েছে এবং কাজ হলে বাকি টাকা দেয়ার কথা ছিলো। জহুরা নামের একজনের মাধ্যমে নারী কাউন্সিলর জাহেদার পিএস মুফিজের কাছে আসি। এরপর যা করার মুফিজ করে দেয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কথিত নারী জহুরা প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের বিদেশ নিয়ে যাবার লোভ দেখিয়ে জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বানাতে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা—কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। দালাল চক্রের অপর মুফিজ পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহেদা আক্তারের সহকারী বলে জানা যায়। সে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদে স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ পৌরসভায় বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। এছাড়া জাহেদ উল্লাহ জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজনীয় পিতা, মাতা, ফুফু, চাচা এবং অন্যন্যা কাগজপত্র যোগাড় করে পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নেজাম উদ্দিন। সে নিজের পরিবারের সদস্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের ভোটার করতো। এভাবে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশী নাগরিক। এছাড়া কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিনিয়ত ঘটছে খুন, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সিলর জাহেদা আক্তার ও তার পিএস মুফিজের মাধ্যমে অসংখ্য রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে ভোটার হয়ে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে। এর আগেও কাউন্সিলর জাহেদার বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সৃজন করে দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর জাহেদা আক্তার বলেন, ‘এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আর আমার সহকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওসমান সরওয়ার আলম টিপু বলেন, ‘পৌরসভার কিছু দালালের কারণে আমাদের সবার মানসম্মান যাচ্ছে। এসব দালাল চক্র খুব ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। গত ২ দিন আগে আমি গোপন সূত্রে খবর পাই রোহিঙ্গা এক যুবক আমার এলাকার ভোটার হতে কাগজপত্র জমা দিচ্ছেন। সাথে সাথে নির্বাচন অফিসে গিয়ে জানতে পারি তার ওয়ার্ডের হয়ে দালালের মাধ্যমে ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে ভোটার হতে আসছে রোহিঙ্গা যুবক। পরে সন্দেহের ভিত্তিতে নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা ফাইলগুলো পর্যবেক্ষণ করার সময় কৌশলে দৌড়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টাকালে আমার সহযোগীরা তাকে ধরে ফেলে। পরে জিজ্ঞেসাবাদে সবকিছু স্বীকার করে।’ কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র সালাউদ্দিন সেতু পৌরসভায় দালাল চক্রের বিষয়ে মুখ খুলেন। তিনি বলেন, কক্সবাজার পৌরসভায় এখন দালাল চক্র বেড়েছে। বিশেষ করে পৌরসভার বিভিন্ন কর্মচারী ও বাহিরের দালাল চক্রের যোগসাজশে তৈরি করেছে সিন্ডিকেট। পৌরবাসী সেবা নিতে এসে যারা টাকা দিবে তাদের কাজ আগে হবে আর যারা টাকা দিবে না তাদের ভোগান্তি পোহাতে হবে। আমরা অনেকবার এসব দালালের দৌরাত্ম্য বন্ধের চেষ্টা করেছি কিন্তু আমরা ব্যর্থ। এসব দালালের মুখোশ উন্মোচন করতে প্রশাসনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সাংবাদিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

‘স্টেপ ডাউন ইউনুস’পোস্ট করে আটক হলেন যুবক!

জনগণ বলছে: কাউন্সিলর জাহেদা জালিয়াতি করে অনেকদিন খেয়েছেন, আর কতো খাবেন?

কাউন্সিলর জাহেদা ও পিএস মুফিজের আশীর্বাদে রোহিঙ্গারা পাচ্ছে কক্সবাজার পৌরসভার সনদ

প্রকাশিত সময় : ০৬:৩২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০২৪

কক্সবাজার পৌরসভায় আবারও দলাল চক্রের দৌরাত্ম বেড়েছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে গড়ে উঠেছে কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। পৌরসভায় জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়ার দায়িত্ব নেন এসব চক্র। দালালদের মাধ্যমে নানা কৌশলে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে রোহিঙ্গারা। আর এতে জড়িত পৌরসভার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা—কর্মচারী ও প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি। জানা যায়, পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে উৎপেতে থাকে এসব দালাল চক্র। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত টাকা নিয়ে তারা ভোটার বানাতে নানা অপতৎপরতা শুরু চালায়। জন্মসনদের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দালাল চক্রের সদস্যরাই ম্যানেজ করে দেন। জনপ্রতিনিধিরা তাদের প্রকৃত নাগরিকের স্বীকৃতি দেওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এভাবে লাখ টাকার বিনিময়ে জন্মনিবন্ধন সনদ কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছে রোহিঙ্গারা। গত বুধবার (৫ জুন) দালালের মাধ্যমে ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে ভোটার হতে এসে স্থানীয় কাউন্সিলরের হাতে আটক হয় জাহেদ উল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা যুবক। আটক হওয়ার পর ওই রোহিঙ্গা যুবক জানান দালাল চক্রের পরিচয়। জানতে চাইলে রোহিঙ্গা যুবক জাহেদ উল্লাহ বলেন, ‘বিদেশ যাওয়ার জন্য ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশী দালালের মাধ্যমে ভোটার হতে চেয়েছিলাম। এ জন্য দালাল চক্রের কাছে নগদ ১ লক্ষ টাকার প্রদান করা হয়েছে এবং কাজ হলে বাকি টাকা দেয়ার কথা ছিলো। জহুরা নামের একজনের মাধ্যমে নারী কাউন্সিলর জাহেদার পিএস মুফিজের কাছে আসি। এরপর যা করার মুফিজ করে দেয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কথিত নারী জহুরা প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের বিদেশ নিয়ে যাবার লোভ দেখিয়ে জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বানাতে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা—কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। দালাল চক্রের অপর মুফিজ পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহেদা আক্তারের সহকারী বলে জানা যায়। সে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদে স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ পৌরসভায় বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। এছাড়া জাহেদ উল্লাহ জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজনীয় পিতা, মাতা, ফুফু, চাচা এবং অন্যন্যা কাগজপত্র যোগাড় করে পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নেজাম উদ্দিন। সে নিজের পরিবারের সদস্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের ভোটার করতো। এভাবে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশী নাগরিক। এছাড়া কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিনিয়ত ঘটছে খুন, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সিলর জাহেদা আক্তার ও তার পিএস মুফিজের মাধ্যমে অসংখ্য রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে ভোটার হয়ে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে। এর আগেও কাউন্সিলর জাহেদার বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সৃজন করে দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর জাহেদা আক্তার বলেন, ‘এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আর আমার সহকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওসমান সরওয়ার আলম টিপু বলেন, ‘পৌরসভার কিছু দালালের কারণে আমাদের সবার মানসম্মান যাচ্ছে। এসব দালাল চক্র খুব ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। গত ২ দিন আগে আমি গোপন সূত্রে খবর পাই রোহিঙ্গা এক যুবক আমার এলাকার ভোটার হতে কাগজপত্র জমা দিচ্ছেন। সাথে সাথে নির্বাচন অফিসে গিয়ে জানতে পারি তার ওয়ার্ডের হয়ে দালালের মাধ্যমে ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে ভোটার হতে আসছে রোহিঙ্গা যুবক। পরে সন্দেহের ভিত্তিতে নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা ফাইলগুলো পর্যবেক্ষণ করার সময় কৌশলে দৌড়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টাকালে আমার সহযোগীরা তাকে ধরে ফেলে। পরে জিজ্ঞেসাবাদে সবকিছু স্বীকার করে।’ কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র সালাউদ্দিন সেতু পৌরসভায় দালাল চক্রের বিষয়ে মুখ খুলেন। তিনি বলেন, কক্সবাজার পৌরসভায় এখন দালাল চক্র বেড়েছে। বিশেষ করে পৌরসভার বিভিন্ন কর্মচারী ও বাহিরের দালাল চক্রের যোগসাজশে তৈরি করেছে সিন্ডিকেট। পৌরবাসী সেবা নিতে এসে যারা টাকা দিবে তাদের কাজ আগে হবে আর যারা টাকা দিবে না তাদের ভোগান্তি পোহাতে হবে। আমরা অনেকবার এসব দালালের দৌরাত্ম্য বন্ধের চেষ্টা করেছি কিন্তু আমরা ব্যর্থ। এসব দালালের মুখোশ উন্মোচন করতে প্রশাসনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সাংবাদিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।