মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে আসা একটানা বিস্ফোরণের শব্দের কেঁপে উঠছে কক্সবাজারের টেকনাফ শহর ও আশপাশের এলাকা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকেই মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে মর্টার শেল বর্ষণ ও ভারী গোলার বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। টেকনাফের নাফ নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ সমগ্র উপজেলায় সারা রাতই বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন বাসিন্দারা। এ সময় অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিস্ফোরণের কথা জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। বাসিন্দাদের অনেকে বলছেন, এমন বিস্ফোরণের শব্দ আগে শোনেননি তাঁরা।
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে লড়াই তীব্রতর হওয়ায় রোহিঙ্গা নাগরিকদের অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে দেশত্যাগের জন্য সীমান্তে জড়ো হয়েছেন বলে সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। তবে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।
জানা গেছে, নাফ নদীর ওপারে মংডু শহরের নিকটবর্তী খায়েনখালী খালসহ কয়েকটি এলাকার আশপাশে রোহিঙ্গারা জড়ো হয়েছে। এরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে টেকনাফে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সীমান্ত এলাকার লোকজন। গতকাল বিকেল পাঁচটার পর থেকে আজ সকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের কাউয়ারবিল ও পেরাংপুরু এলাকায় একের পর এক মর্টার শেল, বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। সেসব স্থানে আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ছে।
সম্ভাব্য রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আজ সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টেকনাফের চৌধুরীপাড়ার ট্রানজিট ঘাট, জালিয়াপাড়ার নাইট্যং পাড়া, কেরুনতলী, বরইতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিজিবি টহল দিচ্ছে। সীমান্তের কাছাকাছি কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
পরিস্থিতি সম্পর্কে টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিয়ানমারের ওই পার থেকে বিকট বিস্ফোরণে শব্দ অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধের তীব্রতার কারণে রোহিঙ্গারা সীমান্তে জড়ো হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনী। গোয়েন্দা নজরদারি, টহলও বাড়ানো হয়েছে।
মিয়ানমারের মংডু শহরের পাশেই নাফ নদী ও খায়েনখালী খাল বয়ে গেছে। ওই খালের মোহনায় গতকাল বিকেলের পর থেকে রোহিঙ্গারা জড়ো হতে থাকে। সীমান্ত এলাকার লোকজন জানান, খালটিতে নৌকায় অপেক্ষমাণ রোহিঙ্গারা মংডু শহরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়েছে। এরা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপ এলাকায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। বর্তমানে যেখানে হামলা হচ্ছে, সেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিকের বসবাস। তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ বাংলাদেশের টেকনাফে পালিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গাকে ঠাঁই দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা সাড়ে তিন মাস ধরে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। সম্প্রতি মংডু টাউনশিপের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে দুটি শহরসহ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪টি সীমান্তচৌকি, রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপের বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এখন মংডু শহর দখলের জন্য লড়ছে তারা।
টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।