কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। পরিশোধিত বিল বকেয়া দেখিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। পুনঃসংযোগ পেতেও গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। তবে বিলম্ব মাশুল তো আছেই। এছাড়াও ডিমান্ড চার্জ, মিটার ভাড়া, সাথে ভ্যাট, ভৌতিক বিল করাসহ গ্রাহকদের করা হচ্ছে চরমভাবে হয়রানি। এসব বিষয়ে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না গ্রাহক। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কোনো বিষয়ে জানতে গেলে গ্রাহকদের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খারাপ আচরণ করারও অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, পিএমখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকার মোঃ খলিলের ছেলে ফজল কাদের ২০ বছর ধরে মুদির দোকান ও পোল্ট্রি ব্যবসা করে আসছে। এইসব ব্যবসা করতে গিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানির শিকার হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বারবার। এ ব্যাপারে পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ফজল কাদের প্রতিবেদককে বলেন, গত শুক্রবার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন কাউকে কিছু না বলে তার দুই হাজার লেয়ার মুরগির খামারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে চলে যায়। জুমার নামাজ শেষে মুরগিকে খাদ্য পানিয় দিতে গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি নজরে আসে তার। বর্তমান মাসের রানিং বিল বাকি ছাড়া অন্য কোন মাসের বিল বাকি নেই। গত মাসে বিকাশের মাধ্যমে একসাথে দু’ মাসের বিল পরিশোধ করে দিয়েছে। সে আরো বলেন, প্রায় সময় কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর আগেও এ অফিসে ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয় তাকে। কেন ? কোন অপরাধে তার খামারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু জানেন না। তাই ঘটনাস্থল বা এর আশপাশের এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের লোকজনকে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে অফিসের বড় (জিএম) স্যারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেছেন বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ফজল কাদের।
ছনখোলা মালিপাড়া এলাকার একরামুল নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী একরামুল প্রতিবেদককে জানান, তার প্রায় ৭/৮ মাসের বিদ্যুৎ বিলের কাগজে দুই হাজার একশত টাকার বিল বাকি আছে। খামখেয়ালিপনা বশত: (অবহেলা) বিলগুলো পরিশোধ করেনি। তবে ঘটনার দিন বাড়িতে কেউ ছিলো না। তার একটি ছাগলকে কুকুরে কামড়ানো হলে আহত ছাগলের চিকিৎসা করতে তার স্ত্রী পশু হাসপাতালে চলে যায়। এ সময়ে বিদ্যুৎ অফিসের লোক তার ঘরের লাইন বিচ্ছিন্ন করতে যাওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে জেনেছেন। এরপর তার ছোট্ট ছেলের মাধ্যমে বিল বাকির সমস্ত টাকা পাঠিয়ে দেন তাদের নিকট। কিন্তু টাকা না নিয়ে তার ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে চলে গেছে। এ ঘটনায় তার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সে।
এক ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) বলেন, ভোগান্তির আরেক নাম কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। অফিসের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের নানাভাবে হয়রানি করে থাকেন। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকেরা যে আচরণ করে তা প্রকাশ করতে লজ্জা হয়। কোনো গ্রাহকের এক মাস বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। আবার অনেক প্রভাবশালী গ্রাহকের সারা বছরের বিল বাকি থাকলেও তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়না। একবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে হয়রানির শেষ নেই। পুনঃসংযোগ পেতে এক হাজার ২০০ টাকা জমা দিতে হচ্ছে।
গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ থাকা সত্ত্বেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হয়রানি করা, বিলের টাকা নগদে দিলেও না নিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, তিন-চার মাস অন্তর দুই /তিন গুণ বিল বৃদ্ধিতে আসা সহ ঘন্টার পর ঘন্টা তীব্র লোডশেডিংয়ের বিষয়ে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দায়িত্বরত জিএম এর সাথে কথা বলেন প্রতিবেদক। এ বিষয়ে জিএম (জেনারেল ম্যানেজার) মকবুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর খামারের মালিক তাকে মুঠোফোনে জানালে বিদ্যুৎ বিলের কাগজ নিয়ে তাকে অফিসে আসতে পরামর্শ বলেছেন। অফিসে আসলেই তার কি সমস্যা দেখে সমাধান করে দেব। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে বিল নেয়ার বিধান নেই। বিল পরিশোধ করার জন্য সময় ও অনেক সুযোগ দেওয়া আছে। সুবিধামতো স্থানে গিয়ে বিদ্যুৎ বিল দিবে গ্রাহক। অভিযানের সময় লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিলে অন্যায় করেনি। তবে জুন মাসে বিল-আদায়ের টার্গেট থাকে, বিধায় এ মাসে তারা সুযোগ দেন। আগামী জুলাই মাস থেকে একটি বিল বাকি থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।কোন কারণে গ্রাহকের অতিরিক্ত বিল হলে মিটার রিডিং বা মোবাইলে চিত্র ধারণ করে অফিসে আসলে সমাধান করে দেব। কথা বলার শেষ পর্যায়ে, ক্ষমতার দাম্ভিকতা দেখিয়ে সাড়ে তিন লক্ষাধিক গ্রাহককে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে জিএম মকবুল আলম বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রয়েছে তন্মধ্যে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি খুবই জঘন্য বলে মন্তব্য ছুঁড়ে দেয় প্রতিবেদকের দিকে।