নিজের বাড়ি-ভিটা ফিরে পেতে দুই শিশুসন্তান নিয়ে ১০ জুন থেকে ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন কক্সবাজারের বাসিন্দা পরিবেশকর্মী দিদারুল আলম।
অনশণরত অবস্থায় কক্সবাজার সদর উপজেলা বাপার সদস্য দিদারের খোঁজ খবর নিতে ছুটে যান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।
অনশণরত দিদারের দাবি, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে কক্সবাজার সদর থানার খুরুশকুল ইউনিয়নের তাদের বাড়ি-ভিটা, মাছের খামার, কৃষি জমিসহ ৬ একর জায়গা জোর করে দখলে নেয় জাহাঙ্গীর কাশেম নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালী। ঘটনায় সাড়ে তিন বছরেও কোনও মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। জায়গা-জমি ফিরে পেতে পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ বিভিন্ন বিভাগে অভিযোগ দিয়েও কোনও সমাধান পাচ্ছেন না। সবশেষে ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন তিনি।
ঈদুল আজহার দিন (১৭ জুন) বিকালে প্রেস ক্লাবের সামনে ফুটপাতে দেখা যায় দিদারুল ও তার পরিবারকে। গত ১০ জুন থেকে পরিবার নিয়ে আমরণ অনশনে আছেন বলে জানান দিদারুল।
তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগেই আমাদের ঈদ চলে গেছে। বাড়ি-জমি হারিয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি। ঈদের দিন সন্তানদের কোনও খাবার দিতে পারছি না। এখন আমাদের অস্তিত্ব ফিরে পেতে যুদ্ধ করছি।’
চাষি দিদারুল আলম বলেন, ‘২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি জাহাঙ্গীর ও তার লোকজন বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করে। আমার মাছের খামার, কৃষি জমি সব কিছু কেড়ে নেয়। অনেকবার থানায় অভিযোগ করেছি। মামলা নেয় না। ঘটনার নয় মাস পর একটা জিডি (সাধারণ ডায়রি) নিয়েছিল থানা পুলিশ। কিন্তু জাহাঙ্গীর অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশও তাকে ভয় পায়। পুলিশ আমাকে বহু দিন ঘুরিয়ে বলছিল, ১০-২০ জন সাক্ষী নিয়ে এলে মামলা নেবে। নয়তো জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কথা বলার তাদের কোনও সাহস নাই।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমার কোনও অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, জেলা প্রশাসক, র্যাব প্রধান, পুলিশ সুপারসহ ৯টি অধিদফতরে অভিযোগ দিয়েছিলাম। তবু কোনও সমাধান পাইনি। জমি-বাড়ি ফিরে পেতে বিভিন্ন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাওয়ায় জাহাঙ্গীর অনেকবার আমার ওপর হামলা করছে। আমাকে পরিবারসহ মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। জাহাঙ্গীর স্থানীয় মৃত আবুল কাশেমের ছেলে। তবু তার অনেক ক্ষমতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। তিনিই পারেন আমার সন্তানদের আশ্রয়স্থান ফিরিয়ে দিতে। আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তারপরও আমাকে কেউ দেখছেন না।
দিদারুল বলেন, ‘প্রশাসন হয় আমার বাড়ি ফিরায়ে দিক, নয়তো আমাদের গুলি কইরা মাইরা ফেলুক। তাইলে আমাদের আর বিচারের দরকার নাই। আমরা আর কারও কাছে বিচার চাইবো না। কেউ দায়ী থাকবে না। খোদার কসম, আল্লাহর কসম করে বলছি, আমরা কারও কাছে অভিযোগ দেবো না। এমনিতে তো মারা যাবো। এর চেয়ে ভালো প্রশাসন আমাদের মেরে ফেলুক।’
তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমার কতটা কষ্ট হচ্ছে তা আমি ছাড়া কেউ জানে না। সাইক সুলতান তুরাব (৭) ও নওশিন নাজিয়াত (২) নামে আমার দুটি শিশুসন্তান আছে। আমাদের এখন আর কোনও উপায় নেই। আমরা যদি বিচার না পাই তাইলে এখানেই আত্মহত্যা করব। না হলে আমরা গাড়ির নিচে পইরা মারা যাব। এছাড়া আমার আর কোনও পথ খোলা নাই। এমনিতে কক্সবাজারে গেলে তারা আমাদের মেরে ফেলবে। এর চেয়ে ভালো নিজেরাই আত্মহত্যা করা।’
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, ‘আমি এই থানায় আছি ছয় মাস ধরে। সাড়ে তিন বছর আগের ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানি না। তিনি থানায় এসেছিলেন কিনা, কোনও অভিযোগ করেছিলেন কিনা অথবা কেন মামলা হয়নি, এসব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।