হাঁপানি শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। মশা মরছে না, মরছে অন্যান্য কীটপতঙ্গ ও টিকটিকি। তারপরও থেমে নেই নতুন কোম্পানির পণ্য। সহনীয় মাত্রার চেয়ে দেওয়া হচ্ছে বেশি কেমিক্যাল। মশার কয়েলে সর্বোচ্চ দশমিক ০৩ মাত্রার ‘অ্যাকটিভ ইনগ্রিডিয়েন্ট’ ব্যবহারের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের বিভিন্ন বাজার অনুমোদনবিহীন নকল, বিষাক্ত ও নিম্ন মানের মশার কয়েলে সয়লাব হয়ে গেছে। চলছে হরদম বেচাকেনা।
বিশেষ করে পান্ডা কিং হাই পাওয়ার, বাওমা নো-স্মোক, বাওমা মাইক্রো স্মোক, বসুন্ধরা গ্রুপের এক্সট্রেইম, পাতা বাহার চুই-মিং, পাতা বাহার এক্সট্রা জাম্বু, আবেদীন বুম বুম, বুলেট কিং চুই-মিং, বুলেট কিং হাই পাওয়ার, বুলেট কিং মেগা, ফাইজার হাই পাওয়ার জাম্বু, পোলার কিং, রিয়েল লাক্সারী, অল টাইম সুপার, সৈনিক কিং জাম্বু, সিটি কালো হিট, নো টেনশন, টিপটপ কিং, টুপটপ চায়না, টিপটপ মশার কয়েল, রিলাক্স মেগা, রিলাক্স গ্রীন পাওয়ার, নাইট রোজ ব্লাক কিলার, সুপ্রিম, স্টার, অ্যাটাকিং, তুলসীপাতা, সুপার মি, ডুয়েল, ড্রাগন, ড্রাগন হেড সহ আরও অনেক বিচিত্র নামের কয়েল হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে।
সচেতন নাগরিকরা বলেছেন, ভেজাল ও নকল কয়েল মশার পাশাপাশি ধীরে ধীরে মানুষ মারার অস্ত্র হিসেবেও কাজ করছে। অবৈধ এ কারবারে কিছু অসাধু মানুষ রাতারাতি কোটিপতি বনে গেলেও, পক্ষান্তরে মানুষ নানা রোগব্যাধীর শিকার হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য সচেতনদের মতে, এসব কয়েল ব্যবহারে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। আর্সেনিকের প্রভাব যেমন দীর্ঘমেয়াদি, তেমনি এসব কয়েলের বিষাক্ত উপাদান ভোক্তাদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগ সৃষ্টি করছে। তাই মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব কয়েলের অনুমোদন ও স্বাস্থ ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনা করে উৎপাদক, সরবরাহকারী ও বিক্রেতাদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারি সংস্থার কার্যকর ভূমিকা অত্যাবশ্যক বলে দাবি করছেন সচেতন ভোক্তারা।
জানা গেছে, মশা তাড়ানোর বদলে কীটপতঙ্গ মারার মতো বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করছে বেশ কয়েকটি মশার কয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগের সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেই।
অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের মশার কয়েলে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ‘অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট’।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সংক্রামক রোগ ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজিরের মতে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে কীটনাশক বা কেমিক্যাল মেশানো হলে মশা তাড়ানোর কয়েল থেকে অনেক ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে মানবদেহে নানা রোগের পাশাপাশি ক্যান্সারের উপক্রম ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ডা. শাহজাহান নাজির আরও বলেন, মশা তাড়ানোর কয়েলে শূন্য দশমিক ১ থেকে শূন্য দশমিক ৩ মাত্রার ‘অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট’ নামক কীটনাশক ব্যবহার নির্ধারণ করেছে। এ মাত্রার কীটনাশক ব্যবহার হলে মশা পালিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু চীন, থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা ও বাংলাদেশের কিছু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ক্রেতা আকৃষ্ট করতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করছে। এতে মশাসহ পোকামাকড়, তেলাপোকা এমনকি টিকটিকিও মারা যাচ্ছে। এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধছে মানবদেহে।
মশার কয়েলে মাত্রাতিরিক্ত বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার করায় শিশুর বিকাশও কমে যেতে পারে। বড়দের স্মৃতিভ্রম, ঝাঁকুনি, মানসিক দৃঢ়তা, মাথাব্যথার মতো সমস্যা হতে পারে।
বালাইনাশক অধ্যাদেশ পেস্টিসাইড অর্ডিন্যান্স ১৯৭১ ও পেস্টিসাইড রুলস ১৯৮৫ অনুসারে মশার কয়েল উৎপাদন, বাজারজাত ও সংরক্ষণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কয়েলের নমুনা পরীক্ষা করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ‘পাবলিক হেলথ প্রোডাক্ট’ (পিএইচপি) নম্বর অনুমোদন দেবে। এরপর পিএইচপি কাগজপত্র দেখে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন মিললেই শুধু বালাইনাশক পণ্য হিসেবে মশার কয়েল উৎপাদন ও বাজারজাত করা যাবে।