সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড রহমতপুর এলাকার নুরুল আলমের ৫০ বছরের ঘরবাড়ি জবর দখল ও লুটপাটের অভিযোগ উঠছে।
একটি সূত্র জানান, ভূমিদস্যুরা নুরুল আলমের পরিবারের উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে ছেলে মেয়েদেরকে কাটা ও ফোলা জখম করে গুরুতর আহত করে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহতদের নিয়ে বাসায় তালা দিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে সন্ত্রাসীরা বাসার তালা ভেঙে ঘরে ডুকে মালামাল লুটপাট করেন এবং ঘরবাড়ি দখল করে নিয়েছে। জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ননজুডিশিয়াল স্টাম্পে জমি বিক্রির ভূঁয়া ডকুমেন্ট তৈরী করে নুরুল আলমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা- অভিযোগ ও পরিবারের সদস্যদের উপর বারবার হামলা চালিয়ে আসছিলেন ভূমিদস্যু চক্র। নুরুল আলমের জমি দখল নিতে দিনদিনই মরিয়া হয়ে ওঠে শীর্ষ সন্ত্রাসী, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নামধারী কতিপয় নেতা ও ভূমিদস্যুদের সমন্বয়ে গড়ে উঠা চক্রটি। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে নুরুল আলমের ঘরবাড়ি জবর-দখলের দূরভিসন্ধি চালিয়ে আসছিল তারা।
জেলার বিভিন্ন এলাকার টপটের সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা এবং তাদের মাধ্যমেই সুবিধাভোগকারি ক্ষমতাসীন দলের ও বিএনপির নামধারী কতিপয় নেতার মিথ্যা মামলা এবং জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে নুরুল আলম। আর ভূমিদস্যুদের দায়ের করা মিথ্যা মামলা ও আইন-আদালত এবং স্থানীয় বিচার শালিসি বৈঠকের রায় বারবার পক্ষে থাকায় নুরুল আলমের পরিবারকে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। সর্বশেষ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আশ্রয় নিয়েও ভূমিদস্যুদের দখলবাজি ঠেকাতে পারেনি জমির মালিক নুরুল আলমের পরিবার।
সেখানে প্রায় ৪ যুগ ধরে বসবাসকারী ভোক্তভোগী নুরুল আলমের দাবি, শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে থানা পুলিশের তালিকাভুক্ত দুর্ধর্ষ সশস্ত্র সন্ত্রাসী আড়াইডজন মামলার আসামি নুরুল ইসলাম প্রকাশ নুরু ডাকাত, শাহাব উদ্দিন শাপু, মোর্শেদ আলম টিটুসহ ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী তার বসতবাড়িতে অনধিকারে প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের উপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ফিল্মি স্টাইল তার বসতবাড়িতে ডুকে অবৈধ অস্ত্র তাক করে ধরে তার ৫ ছেলেমেয়েকে ধারালো দায়ের কোপে কাঁটা জখম, লোহার রড দিয়ে ফোলা যখমের আঘাত করে আহত করে টেনে হেঁচড়ে ঘর থেকে বের করে দেন। গুরুতর কাটা জখমে আহত ছেলে মেয়ের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার পরপরই সন্ত্রাসী নুরু গ্যাং তার বসতবাড়িতে ডুকে লুটপাট করেন। ঘরে থাকা মুল্যবান জিনিস, কাগজ পত্র, স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা লুট করেন। ভাড়াবাসাতে অবস্থানরত ভাড়াটে লোকজনকে লোভদেখিয়ে তাদের পক্ষে বসকরে দখলদার সাজিয়ে তার ঘরবাড়ি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। সেখানে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর একটি দল ২৪ ঘন্টার পাহারাদার বসিয়ে রাখছেন সন্ত্রাসী নুরু ডাকাত। এখন আমি ও আমার পরিবারের কোনো সদস্য ওখানে গেলে বা যাওয়ার চেষ্টা করলে হত্যা করে ওখানেই লাশ পুঁতিয়ে রাখবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে ডাকাত নুরু গ্যাংস্টার দের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত।
নুরুল আলম আক্ষেপ করে বলেন, ওখানে ১২০শতক (তিন কানি) জমি আমমোক্তার (৩-৪-২০১১/৮১৪, ১/৮/২০১২/৬০৪) নামা মূল্য কিনা সম্পত্তি আছে আমার। আর কিছু ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত জমি আমার দখলে আছে। যে জমির মালিক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মহোদয় তথা সরকার। অথচ এই জমি তার পিতার জীবদ্দশা থেকে তাদের ভোগদখলে আছে। খাস খতিয়ানভূক্ত জমির বন্দোবস্তি পাওয়ার পক্ষে আবেদন (সা:জে: প্র:/ কক্স/ রাজস্ব/ ২০১১-১৬৮২) করেন। যার কাজ চলমান রয়েছে। বিগত ৫০ বছরের অধিক সময় জমিটি নিজের দখলে থাকা সত্ত্বেও এপর্যন্ত ১শতক জমিও বাইরের কাউকে বিক্রি করেনি। তাছাড়া ওই জমিতে মুল্যবান ঘামারি, তেচ্ছল, সেগুনগাছের চারা রোপণ করেন সম্পুর্ন নিজের উদ্যোগ ও অর্থায়নে। ওইসব গাছের চারাকে ৩০-৩৫ বছর ধরে পরিচর্যা করে ছেলেমেয়ের মতো বড় করে একটি বিশাল বাগানে পরিণত করেন। শখের বশে, প্রাকৃতিকে ভালোবেসে নিজের মূল্যবান সময় ব্যয় করে এসব করছেন মাত্র। অথচ নিজের সংসার পরিচালনা করতে নিদারুণ অর্থ কষ্টে দিনাতিপাত করলেও কোন দিন একটি গাছ কর্তন করেনি। বর্তমানে এই গাছের বাজার মূল্য হিসাব করলে অন্তত এক/দেড়কোটি টাকার উপরে। আজকে যারা আমার ঘরে খেয়েছে-পড়েছে, ঘুমিয়েছে, তাদের প্রয়োজনে জমিও দিয়েছি তাদের কর্তৃক অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হবো আর তারা কিনা আমার ঘরবাড়ি কেড়ে নিবে তা কোনদিন ভাবিনি।
আমার দখলে থাকা কিছু খাস খতিয়ানভূক্ত জমি ও মুল্যবান গাছের বাগানের প্রতি সন্ত্রাসী নুরুর গ্যাংস্টারের লোলুপ দৃষ্টি গোচর হয়েছে দীর্ঘদিন। আমার ভোগদখলে থাকা জমি ও বাগান বাড়ি কেড়ে নিতে এর আগেও অসংখ্য বার চেষ্টা চালিয়ে প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে ডাকাত নুরু গ্যাং ও অন্যান্য ভূমিদস্যুরা। তারা কোন উপায় না পেয়ে জাল জালিয়াতিতে পাকা, ভূমিদস্যু চক্রের মূল হোতা, বিএনপি নেতা পরিচয় দানকারী আবদুল মালেক ইমনের সঙ্গে আঁতাত করেন নুরু ডাকাতসহ আওয়ামী নামধারী কয়েক নেতা। কিছু সংখ্যক ভূমিদস্যুকে জমি বিক্রি করেছি বলে ভূয়া ডকুমেন্ট তৈরি করেন। ওই ভূয়া ডকুমেন্ট যেখানে সেখানে সাম্মিত করে জমি দখলের পাঁয়তারা করছে যুগপৎ। ভূমিদস্যু আবদুল মালেক ইমনের নেতৃত্বে
২কোটি ৮০ লাখ টাকা দিয়ে আমার কাছ থেকে জমি কিনেছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি সম্পূর্ণ ভূয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে আমার বিরুদ্ধে কোর্টে এম আর মামলা দায়ের করেন ভূমিদস্যু চক্র। পরবর্তীতে তা সম্পূর্ণ ভূয়া প্রমাণিত হয়ে আমার পক্ষে রায় দিয়েছে মাননীয় আদালত। এর মধ্যেই ভূমিদস্যুরা হারিয়ে গেলে তৎকালীন সদর থানায় কর্মরত এক এস আইকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আমাকে গ্রেফতার করে থানায় আটকিয়ে রেখে নারী ধর্ষণ মামলা দিয়ে জেলে পাঠায় ভূমিদস্যু মালেক গ্যাং। এরপর ভূমিদস্যুদের সাথে আঁতাত করে মোটা অংকের টাকা দিয়ে দুই ছেলেকে বালিকা মাদ্রাসার সামনে থেকে ধরে নিয়ে ডাকাতি প্রস্তুতি মামলা দিয়ে জেলে পাঠান সদর থানার তৎকালীন এস আই দস্তগীর। এভাবেই যুগ ধরে আমাকেও আমার ছেলে মেয়েদের উপর জোর জুলুম করে আসছে তারা। এরপরও মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে কোন সময় সফল হতে পারেনি ভূমিদস্যু গ্যাং। সর্বশেষ গত ২৯ জূন শনিবার কতক আওয়ামী লীগ নামধারী ভূমিদস্যু নেতার নির্দেশে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার অবলা ছেলে মেয়েদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে কাটা যখমের আঘাত করে তান্ডব চালিয়েছে ডাকাত নুরু বাহিনী। তাদের মূল টার্গেট ছিলো আমাকে মেরে ফেলার। আমি পালিয়ে গিয়ে জীবন রক্ষা করি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নুরুল আলমের পুত্রবধূ নূর বেগম বলেন, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। আরো লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলায় অংশ নেয়। ওই সময় আমার স্বামী রুবেল ও শাশুর নুরুল আলম বাড়িতে ছিলেন। এসময় শাশুড় পালিয়ে গেলে প্রাণে রক্ষা পান। যাকে যেভাবে পেয়েছে কুপিয়ে জখম করেছে। অস্ত্রের মুখে বাড়ির লোকজনকে জিম্মি করে দা দিয়ে কুপিয়ে ও লৌহার রড দিয়ে তার স্বামীকে কাটা যখম করেন। মেয়েদের শ্লীলতাহানি করে তাদের ফোন ছিনিয়ে নিয়ে বাড়িভিটি থেকে টেনেহেঁচড়িয়ে সবাইকে বের করে দেন।
নুরুল আলমের ছোট ছেলে মোঃ তোহেল বলেন, দুপুরে বাড়িতে কাজ করছিলাম। এ সময় লারপাড়ার ডাকাত নূরু ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে শটগান, হকিস্টিক, লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। আমাকে হাঁটুর নিচে কোপ দিয়ে মারাত্মক কাটাযখম করে আহত করলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গেলে হাতের বাহু, পেটপিঠে লোহার রড দিয়ে আঘাত করেন। এভাবে হামলা করে আমার বাড়িটি দখল করেছে তারা। ঘরে রাখা ভাবির ২ ভরি সোনার গয়না। আমাদের আকিকার জন্য গরু কিনতে জমিয়ে রাখা ৭০ হাজার টাকা লুট করেন।
নুরুল আলমের মেজো ছেলে সোহেল বলেন, হামলার সময় আমার বাড়িতে গিয়েছে নোয়াখাইল্যা নাজমুল হোসেন মিটু, সাইফ উদ্দিন শাপু বাহিনীর প্রধান শাপু, শীর্ষ সন্ত্রাসী নুরু বাহিনীর প্রধান নুরুসহ ২০/২৫ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রূপ। মুর্শেদ টিটু, জামায়াত নেতা জাহাঙ্গীর আলম, নাজমুল হোসেন মিঠু, আবদুল মালেক ইমনের কু প্ররোচনা ও কয়েকজন ভূমিদস্যু আওয়ামীলীগ নেতার নির্দেশে এই হামলা ও লুটপাট করে তাদের ঘরবাড়ি জবর দখলের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার খবর পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও ঘরে ঢুকেপড়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বের করে দেয়নি পুলিশ। সে দিন থেকেই আমার ঘরবাড়ি জবর দখল করে রাখছে সন্ত্রাসীরা। এখান অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
জানতে চাইলে নুরুল আলম বলেন, আমার পিতা মৃত্যু লাল মিয়া জীবদ্দশায় ৬০/৭০ বছর এই জমির শাসন করেছেন। এখানে কিছু জমি খাস খতিয়ানভূক্ত আর কিছু জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন রেজিস্ট্রি জমি আছে। এখানে এরকম হাজার হাজার একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। আবার এ জমি অন্তত ৮/১০ করে হাত বদল (বেচাবিক্রি) হয়েছে বর্তমানে। আমার দখলে কিছু জমি খাস খতিয়ানভূক্ত, কিছু জমি আমমোক্তার নামামূলে ক্ষমতা প্রাপ্ত জমি। সেখানে বাড়ি করে বসবাস করে আসছি। গত একযুগ ধরে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী বাড়ির জমি দখলের জন্য হামলা মামলা করেন। ওই সময় তাদের হামলায় আমার সন্তানরা আহত হন। গ্রামবাসীর প্রতিরোধে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যান। এ বিষয়ে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও চ্যানেলে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়।
উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতের সব পর্যায়ে রায় আমার পক্ষে থাকার পরেও আমার ঘরবাড়িটি জবর দখল করে নেয় ভূমিদস্যুরা। তিনি প্রতিবেদককে সার্বিক বিষয় অবহিত করেন এবং বলেন আমি আমার বাড়ি ও জমি অবৈধ দখলদারের কাছ থেকে উদ্ধার করতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।
অভিযুক্ত জবর দখলকারি নুরুল ইসলাম, শাহাব উদ্দিন শাপু, কামাল পাশা, মোর্শেদ আলম টিটুসহ অন্য কয়েক অভিযুক্তের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নুরুল আলমের পরিবারের উপর হামলা করে ঘরবাড়ি জবর দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সদর থানার ওসি রকিবুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। তদন্ত করে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।