০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেরিন ড্রাইভে ২০ কানি জমি কিনেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে

মেরিন ড্রাইভে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের কেনা জমি।মেরিন ড্রাইভে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের কেনা জমি। কক্সবাজারের টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের পাশে সাত কোটি টাকার জমি কিনেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে মোদ্দাছির খান প্রকাশ সাফি। নিজের নামে কিনেছেন ৮.০৬০০ একর জমি (২০ কানি)। টেকনাফের লেঙ্গুগুরবিল মৌজার এসব জমির আনুমানিক মূল্য সাত কোটি টাকা।
এছাড়া টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপসহ বিভিন্ন মৌজায় তাদের নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে।
এদিকে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও তার ছেলে মোদাচ্ছের খান প্রকাশ সাফিসহ আট জনের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং তার ও স্ত্রী শিরিন আক্তারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এর আগে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর একের পর এক সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা সম্পদ বেরিয়ে আসছে।
স্থানীয় ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, সাবেক মন্ত্রিপুত্রের মোদ্দাসের খান মেসার্স তিতাস বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে শুধু লেঙ্গুরবিল মৌজা থেকে ৮.০৬০০ একর জমি কেনার দলিল পত্র পাওয়া গেছে। দলিলে ছয়টি সৃজিত খতিয়ান পাওয়া গেছে। সেগুলো হচ্ছে, ৩৬৯৭, ৩২৫৭, ৩৫১৩, ৩৭২৬, ৪৬২১, ৩৪২৭। ঠিকানায় বাবা- আসাদুজ্জামান খান কামাল, মা মরহুমা লুৎফুল সাকিনা উল্লেখ করে স্থায়ী-বর্তমান বাড়ি নং-১৩৬/১, মনিপুরীপাড়া, ডাকঘর-তেজগাঁও ১২১৫ ডাকা সিটি করপোরেশন ঢাকা ব্যবহার করা হয়েছে।
দলিলে ২০১৭ সালে সাবেক মন্ত্রিপুত্র সাফি মেসার্স তিতাস বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে লেঙ্গুরবিল মৌজা থেকে ১.৬৮ একর জমি ক্রয় করেন। এসব জমি ২০৫৯, ২০২০ ও ২০২০ তিনটি দাগে ৩২৫৭ নম্বর খতিয়ানে নামে নামজারি হয়। পরে ২০১৭ সালে লেঙ্গুরবিল মৌজা থেকে ১.০৫ একর জমি ক্রয় করেন। উক্ত জমির সৃজিত খতিয়ান নং ৩৪২৭। এই খতিয়ানের জমির দাগগুলো হচ্ছে ২০২৩, ২০৫৯, ২০৫৮, ২০৫৮ ও ২০২০।
একই বছর তিনি আরও ০.৬৩৮ একর জমি কেনেন। এসব জমি ২০২৩ দাগে ৩৫১৩ নং খতিয়ানে নামজারি হয়। এছাড়া ২০১৮ সালে লেঙ্গুরবিল মৌজা থেকে আরও ০.৬৯৮০ একর জমি ক্রয় করেন। এসব জমি ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ নং দাগে ৩৭২৬ নং খতিয়ানে নামজারি হয়। সবশেষ তিনি গত ২০২১ সালে একই মৌজা থেকে আরও ০.২৯২০ একর জমি কেনেন। ৪৬২১ নং খতিয়ানে নামজারিকৃত উক্ত জমির দাগগুলো হচ্ছে ২০৫৯, ২৬২২, ২৬২৩ ও ২৬৩০। বেশিরভাগই এসব জমির কেনার পেছনে স্থানীয় (দালাল) হিসেবে ছিলেন, সৈয়দ হোসেন, মো. আয়ুব ও মো. তৈয়ুব, আবদুর গফুর। এলাকায় তারা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর লোক হিসেবে পরিচিত ছিল। এদের আইনের আওতায় আনলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আরও অবৈধ সম্পদের হিসেব পাওয়া যাবে বলে দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের জমি কেনার নেশা রয়েছে। ছেলে এবং পরিবারসহ অনেকের নামে বেনামে অনেকে সম্পদ কিনেছেন তিনি। বিশেষ করে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষা শাহপরীর দ্বীপে একটা জমি কিনতে বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন। সেখানে প্রায় ৫ একর জমি কিনতে টাকা জমা দিয়েছেন। জায়গাটি কিনতে স্থানীয় সৈয়দ হোসেন, মো. আয়ুব ও মো. তৈয়ুবকে দায়িত্ব দিয়েছিল বলে জানা গেছে।
এছাড়া সাফির সঙ্গে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা জাফর আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছের সখ্যতা আছে। মন্ত্রিপুত্রের ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে ইলিয়াছের পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে টেকনাফে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করারও অভিযোগ রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পুত্রকে টেকনাফে জমি কিনে দেওয়ার কাজে সহযোগিতাও করেছেন ইলিয়াছ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর হলে তাকে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গুলি বর্ষণ করতে দেখা গেছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ‘সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুত্রের জমির কেনায় আমার হাত নেই। অন্যদের মাধ্যমে জমি কিনেছেন তিনি। ঢাকায় থাকার সুবাদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে পরিচয় ছিল। সেই সুবাদে টেকনাফে আসলে দেখা হতো শুধু।’
জমির বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ সাফফাত আলী বলেন, ‘দুদকের কার্যালয় থেকে সম্পদের তথ্য চেয়ে একটি চিঠি পেয়েছি। আমরা এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করেছি।’

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

কক্সবাজারে এক নারী মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে ফাঁস খেয়ে আত্মহত্যা

মেরিন ড্রাইভে ২০ কানি জমি কিনেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে

প্রকাশিত সময় : ০৪:২০:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

মেরিন ড্রাইভে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের কেনা জমি।মেরিন ড্রাইভে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের কেনা জমি। কক্সবাজারের টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের পাশে সাত কোটি টাকার জমি কিনেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে মোদ্দাছির খান প্রকাশ সাফি। নিজের নামে কিনেছেন ৮.০৬০০ একর জমি (২০ কানি)। টেকনাফের লেঙ্গুগুরবিল মৌজার এসব জমির আনুমানিক মূল্য সাত কোটি টাকা।
এছাড়া টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপসহ বিভিন্ন মৌজায় তাদের নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে।
এদিকে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও তার ছেলে মোদাচ্ছের খান প্রকাশ সাফিসহ আট জনের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং তার ও স্ত্রী শিরিন আক্তারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এর আগে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর একের পর এক সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা সম্পদ বেরিয়ে আসছে।
স্থানীয় ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, সাবেক মন্ত্রিপুত্রের মোদ্দাসের খান মেসার্স তিতাস বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে শুধু লেঙ্গুরবিল মৌজা থেকে ৮.০৬০০ একর জমি কেনার দলিল পত্র পাওয়া গেছে। দলিলে ছয়টি সৃজিত খতিয়ান পাওয়া গেছে। সেগুলো হচ্ছে, ৩৬৯৭, ৩২৫৭, ৩৫১৩, ৩৭২৬, ৪৬২১, ৩৪২৭। ঠিকানায় বাবা- আসাদুজ্জামান খান কামাল, মা মরহুমা লুৎফুল সাকিনা উল্লেখ করে স্থায়ী-বর্তমান বাড়ি নং-১৩৬/১, মনিপুরীপাড়া, ডাকঘর-তেজগাঁও ১২১৫ ডাকা সিটি করপোরেশন ঢাকা ব্যবহার করা হয়েছে।
দলিলে ২০১৭ সালে সাবেক মন্ত্রিপুত্র সাফি মেসার্স তিতাস বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে লেঙ্গুরবিল মৌজা থেকে ১.৬৮ একর জমি ক্রয় করেন। এসব জমি ২০৫৯, ২০২০ ও ২০২০ তিনটি দাগে ৩২৫৭ নম্বর খতিয়ানে নামে নামজারি হয়। পরে ২০১৭ সালে লেঙ্গুরবিল মৌজা থেকে ১.০৫ একর জমি ক্রয় করেন। উক্ত জমির সৃজিত খতিয়ান নং ৩৪২৭। এই খতিয়ানের জমির দাগগুলো হচ্ছে ২০২৩, ২০৫৯, ২০৫৮, ২০৫৮ ও ২০২০।
একই বছর তিনি আরও ০.৬৩৮ একর জমি কেনেন। এসব জমি ২০২৩ দাগে ৩৫১৩ নং খতিয়ানে নামজারি হয়। এছাড়া ২০১৮ সালে লেঙ্গুরবিল মৌজা থেকে আরও ০.৬৯৮০ একর জমি ক্রয় করেন। এসব জমি ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ নং দাগে ৩৭২৬ নং খতিয়ানে নামজারি হয়। সবশেষ তিনি গত ২০২১ সালে একই মৌজা থেকে আরও ০.২৯২০ একর জমি কেনেন। ৪৬২১ নং খতিয়ানে নামজারিকৃত উক্ত জমির দাগগুলো হচ্ছে ২০৫৯, ২৬২২, ২৬২৩ ও ২৬৩০। বেশিরভাগই এসব জমির কেনার পেছনে স্থানীয় (দালাল) হিসেবে ছিলেন, সৈয়দ হোসেন, মো. আয়ুব ও মো. তৈয়ুব, আবদুর গফুর। এলাকায় তারা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর লোক হিসেবে পরিচিত ছিল। এদের আইনের আওতায় আনলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আরও অবৈধ সম্পদের হিসেব পাওয়া যাবে বলে দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের জমি কেনার নেশা রয়েছে। ছেলে এবং পরিবারসহ অনেকের নামে বেনামে অনেকে সম্পদ কিনেছেন তিনি। বিশেষ করে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষা শাহপরীর দ্বীপে একটা জমি কিনতে বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন। সেখানে প্রায় ৫ একর জমি কিনতে টাকা জমা দিয়েছেন। জায়গাটি কিনতে স্থানীয় সৈয়দ হোসেন, মো. আয়ুব ও মো. তৈয়ুবকে দায়িত্ব দিয়েছিল বলে জানা গেছে।
এছাড়া সাফির সঙ্গে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা জাফর আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছের সখ্যতা আছে। মন্ত্রিপুত্রের ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে ইলিয়াছের পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে টেকনাফে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করারও অভিযোগ রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পুত্রকে টেকনাফে জমি কিনে দেওয়ার কাজে সহযোগিতাও করেছেন ইলিয়াছ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর হলে তাকে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গুলি বর্ষণ করতে দেখা গেছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ‘সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুত্রের জমির কেনায় আমার হাত নেই। অন্যদের মাধ্যমে জমি কিনেছেন তিনি। ঢাকায় থাকার সুবাদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে পরিচয় ছিল। সেই সুবাদে টেকনাফে আসলে দেখা হতো শুধু।’
জমির বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ সাফফাত আলী বলেন, ‘দুদকের কার্যালয় থেকে সম্পদের তথ্য চেয়ে একটি চিঠি পেয়েছি। আমরা এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করেছি।’