বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ২ দিনের টানা ভারী বর্ষণ পাহাড়ী ঢল ও সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকে অন্তত অর্ধশত গ্রাম পানিতে তলিয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে । পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। বহু কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে, গ্রামীণ সড়ক লণ্ডভণ্ড কালভার্ট বিধ্বস্ত গাছপালা এবং পানের বরজ নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, কক্সবাজারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড। ভারি বৃষ্টিতে জেলার উখিয়াসহ অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।সরেজমিনে দেখা গেছে, জালিয়া পালং ইউনিয়নের নম্বরী পাড়া, ঘাটঘর পাড়া পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া ডেইপাড়া মনখালি, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া, মনির মার্কেট, রুমখা পালং, বড়বিল, পাতাবাড়ি, নলবুনিয়া, খেঁওয়া ছড়ি, বৌ বাজার, কুলাল পাড়া, পাগলির বিল, রাজা পালং ইউনিয়নের কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া তুতুরবিল, হিজলিয়া, পিনজির কুল, রত্না পালং ইউনিয়নের সাদৃ কাটা,পশ্চিম রত্না, বড়ুয়াপাড়া, খোন্দকার পাডা, গয়াল মারা ও পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, রহমতের বিল, বালুখালী তৈলখোলা, আঞ্জুমান পাড়া ফারিবিল সহ অন্তত ৫০ টি গ্রামে পানি তলিয়ে গেছে। চারদিকে পানি আর পানি। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় অনেক গবাদি পশু মারা যাচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, রুমখা চৌধুরী পাড়া, বউ বাজার, পাগলির বিল, বড়বিল, মনি মার্কেট সহ বিভিন্ন এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। সবজি ক্ষেত সহ আমন মৌসুমের ধানের চাষাবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে।স্থানীয় মৎস্য চাষী রিদুয়ান হাকিম,ইসমাইল উদ্দিন জানান, মৎস্য ঘেরে ও পুকুরে পানি ডুকে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে।জালিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম সৈয়দ আলম জানান, সমুদ্র উপকূলীয় ডেইল পাড়া,নম্বরি পাড়া ও ঘাটঘর পাড়ায় কয়েকশো পরিবার পানিতে আটকা পড়েছে।পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান এম.গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান,পালংখালীতে চিংড়ী ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।বহু ঘর-বাড়ি জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হয়েছে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন শুক্রবার বিভিন্ন ইউনিয়নের পানিতে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ফেইসবুকে এক জরুরি বার্তায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত জনগণকে নিরাপদ স্থানে কিংবা পার্শ্ববর্তী সাইক্লোসেন্টার আশ্রয় নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান প্রবল পানির স্রোতে ধান চাষ,সবজি খেত ও পানের বরজ নষ্ট হয়েছে। গ্রামীন অভ্যন্তরীণ কাঁচা রাস্তা ও কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এটিএম কাউসার। তবে তাৎক্ষণিক ক্ষতির পরিমাণ বলতে পারছে না তিনি।উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরো জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেনের নির্দেশনায় সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক দল ও সিপিপি সদস্যরা প্লাবিত এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত মানুষকে নিরাপদ স্থানের সরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রতিটি ইউনিয়নে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক ও সিপিপি সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উপজেলা ফোকাল পার্সন আল মুবিন।জালিয়া পালং, হলদিয়া পালং ও পালংখালী ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন জানান জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়নি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয় উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র গুলো খোলা রাখা হয়েছে। সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোকে হট মিল সহ শুকনো খাবার বিতরণ সহ সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন।