০২:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আপোষহীন জাতীয়তাবাদী সৈনিক মুফিদুল আলমের গল্প – সাঈদ হোসাইন আকাশ

চিকনা লম্বা শরীরে এক অদম্য সাহসী জাতীয়বাদী সৈনিকের গল্প বলবো আজ। ২০১১ সালে দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য ছিলেন এই অগ্র সৈনিক। জিয়া পরিবার, লুৎফুর রহমান কাজল বললে নির্দ্বিধায় যিনি হাসি মুখে মৃত্যু পর্যন্ত বরণ করে নেওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিলেন এমন কয়জন জাতীয়তাবাদী সৈনিকের মধ্যে এই ভাইটি ছিলো প্রথম সারির।

সালটা ২০১৩, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন ছাত্রদলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠিত শহিদুল্লাহ শহিদ ভাইয়ের নেতৃত্বে। সে সময় ঐ কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। অক্টোবর থেকে টানা ৬৩দিনের অবরোধে রামুর প্রতিটি রাজপথে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা অনস্বীকার্য। কনকনে ঠান্ডা শীতের হাওয়ায় রাত ৩টার পর কক্সবাজার টেকনাফ মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধের বীর সৈনিক আমাদের মুফিদ ভাই। কাঠির মাথা বনতলা রাস্তার পর (মনু মিয়ার ফার্ম) এলাকায় টানা আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা ছিলেন।

এরপর ২০১৪ সালে বিকাশ সংসদ সদস্য ও স্থানীয় হাইব্রিড আওয়ামীলীগের রোষানলে পড়েন তিনি ও তার পরিবার। পারিবারিক বিভিন্ন জায়গা জমি বেদখল হতে শুরু করে, স্থানীয় আওয়ামীলগের হামলার শিকার হন টানা ৪ বছরে ৭বারের মতো। বেশ কয়েকবার আশংকাজনক অবস্থায় মৃত্যুর হাতঁ থেকে বেঁচে ফিরেন।

সাদা সিধে মনের এই সৈনিক আওয়ামী দুঃশাসন আমলে হামলার শিকার হয়ে থেমে থাকেননি, তার কলম দিয়েও সে সময়ে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তার লেখনী ছিল অসাধারন। ২০১৭ সালে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান ভুট্টো কর্তৃক সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক হামলার শিকার হোন। চেইন্দা ষ্টেশনে তার দোকান থেকে চৌকিদার দিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদেও টর্চারের শিকার হোন।

তবুও তিনে দমে যাননি, তার সাহসীকতা ও লেখনি চলেতই থাকে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের অগ্রভাগে বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলার আসামী হোন। ১০ ডিসেম্বরের করা একটি মিথ্যা মামলায় মুফিদ ভাই আমি সহ ১০জন (সাইফুল চেয়ারম্যান,মোকতার আহমেদ,আনছারুল হক,মোঃ আব্দুল্লাহ,দিদার) আমরা যখন ঢাকা হাইকোর্টে জামিন নিতে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দ্যেশে ১৭ তারিখ রাত ১০টায় রওনা দেয় সেদিন দিবাগত রাতে গাড়িতে বসা অবস্থায় উনি সহ আমরা আরো বেশকেয়কজন মিথ্যে অফিস পুড়ানো মামলা (কাইম্যারঘোনা ও সমিতি পাড়া) আসামী হয়ে পড়ি। ঢাকা থেকে এক মামলার আগাম জামিন নিয়ে এসেই পরের দিন আতংকগ্রস্থ দক্ষিণ মিঠাছড়ি মাত্র ৭জন (মোক্তার আন্কেল,আনছার ভাই,বন্ধু মনির, মুজিব মেম্বার) মানুষ আমরা পোস্টার লাগাতে সাদর পাড়া স্টেশনে মুফিদ ভাইয়ের নেতৃত্বে আসি। নিজ হাতে সকল পোস্টার ছাঁটানো নিজেই করেন এবং ঘোষণা দেন প্রয়োজনে মরবো তবুও তার কেন্দ্র চাইন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রক্ষা করবে।

৩০ ডিসেম্বর ২০১৮, দক্ষিণ মিঠাছড়ির চাইন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যখন বিএনপি দলীয় কাউকে এজেন্ট বসতে দিচ্ছিলনা। তখন তিনি একাই গিয়ে এজেন্ট বসার অংগীকার করেন ফলশ্রুতিতে আওয়ামীলীগের গুন্ডা বাহিনী দ্বারা বিভীষীকাময় ও নারকীয় হামলার শিকার হোন আমাদের  এই ভাইটি। হাজার হাজার মানুষ তার শরীরের রক্তপাত দেখে মনে করছিলো ঐদিনই তিনি মারা যাবেন। মহান রাব্বুল আলামিনের অসীম কৃপায় তিনি দীর্ঘ ৪ মাস চিকিৎসা (কক্সবাজার,চট্রগ্রাম ও ঢাকা) শেষে সামান্য ভাবে সুস্থ হয়ে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনের দিকে ধাবিত হোন।

তৎকালীন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার হামলার ছবি ও ভিডিও দেখে দলীয় ভাবে বিবৃতি প্রদান করেন।

সে সময়ের হামলায় বেশ কয়েকবার তাকে অপারেশন করতে হয়েছিলো।

এরপর তার হাতে গুরু দায়িত্ব উপজেলা তাঁতীদলের সাধারন সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে। সে দায়িত্ব সততা ও আপোষহীন ভাবে পালন করে যাচ্ছিলেন। ২০২২ সালে কুমিল্লা মহা সমাবেশে কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায় নিজের মোটর সাইকেল চালিয়ে সমাবেশে যোগ দেন তিনি।

বিএনপির যাবতীয় প্রোগ্রাম, আন্দোলন ও সংগ্রামের এ আপোষহীন সৈনিক ২০২৩ সালের জুনে মহিষের শিং এর আঘাতে পাকস্থলীতে আঘাত পেয়ে দীর্ঘ ৪ মাসের চিকিৎসা শেষে ১২ অক্টোবর আমাদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে মহান রাব্বুল আলামিনের জিম্মায় চলে যান।

আজকে তার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান পান।

পরিশেষে তার রেখে যাওয়া সন্তানদের সুস্থতা ও সার্বিক উন্নতি কামনা করি।

সাঈদ হোসাইন আকাশ
যুগ্ম আহ্বায়ক
রামু উপজেলা ছাত্রদল

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

জমে উঠেছে বৃহত্তর বাদশাঘোনা সমাজ পরিচালনা কমিটির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা

আপোষহীন জাতীয়তাবাদী সৈনিক মুফিদুল আলমের গল্প – সাঈদ হোসাইন আকাশ

প্রকাশিত সময় : ০৫:৫১:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

চিকনা লম্বা শরীরে এক অদম্য সাহসী জাতীয়বাদী সৈনিকের গল্প বলবো আজ। ২০১১ সালে দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য ছিলেন এই অগ্র সৈনিক। জিয়া পরিবার, লুৎফুর রহমান কাজল বললে নির্দ্বিধায় যিনি হাসি মুখে মৃত্যু পর্যন্ত বরণ করে নেওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিলেন এমন কয়জন জাতীয়তাবাদী সৈনিকের মধ্যে এই ভাইটি ছিলো প্রথম সারির।

সালটা ২০১৩, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন ছাত্রদলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠিত শহিদুল্লাহ শহিদ ভাইয়ের নেতৃত্বে। সে সময় ঐ কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। অক্টোবর থেকে টানা ৬৩দিনের অবরোধে রামুর প্রতিটি রাজপথে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা অনস্বীকার্য। কনকনে ঠান্ডা শীতের হাওয়ায় রাত ৩টার পর কক্সবাজার টেকনাফ মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধের বীর সৈনিক আমাদের মুফিদ ভাই। কাঠির মাথা বনতলা রাস্তার পর (মনু মিয়ার ফার্ম) এলাকায় টানা আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা ছিলেন।

এরপর ২০১৪ সালে বিকাশ সংসদ সদস্য ও স্থানীয় হাইব্রিড আওয়ামীলীগের রোষানলে পড়েন তিনি ও তার পরিবার। পারিবারিক বিভিন্ন জায়গা জমি বেদখল হতে শুরু করে, স্থানীয় আওয়ামীলগের হামলার শিকার হন টানা ৪ বছরে ৭বারের মতো। বেশ কয়েকবার আশংকাজনক অবস্থায় মৃত্যুর হাতঁ থেকে বেঁচে ফিরেন।

সাদা সিধে মনের এই সৈনিক আওয়ামী দুঃশাসন আমলে হামলার শিকার হয়ে থেমে থাকেননি, তার কলম দিয়েও সে সময়ে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তার লেখনী ছিল অসাধারন। ২০১৭ সালে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান ভুট্টো কর্তৃক সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক হামলার শিকার হোন। চেইন্দা ষ্টেশনে তার দোকান থেকে চৌকিদার দিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদেও টর্চারের শিকার হোন।

তবুও তিনে দমে যাননি, তার সাহসীকতা ও লেখনি চলেতই থাকে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের অগ্রভাগে বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলার আসামী হোন। ১০ ডিসেম্বরের করা একটি মিথ্যা মামলায় মুফিদ ভাই আমি সহ ১০জন (সাইফুল চেয়ারম্যান,মোকতার আহমেদ,আনছারুল হক,মোঃ আব্দুল্লাহ,দিদার) আমরা যখন ঢাকা হাইকোর্টে জামিন নিতে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দ্যেশে ১৭ তারিখ রাত ১০টায় রওনা দেয় সেদিন দিবাগত রাতে গাড়িতে বসা অবস্থায় উনি সহ আমরা আরো বেশকেয়কজন মিথ্যে অফিস পুড়ানো মামলা (কাইম্যারঘোনা ও সমিতি পাড়া) আসামী হয়ে পড়ি। ঢাকা থেকে এক মামলার আগাম জামিন নিয়ে এসেই পরের দিন আতংকগ্রস্থ দক্ষিণ মিঠাছড়ি মাত্র ৭জন (মোক্তার আন্কেল,আনছার ভাই,বন্ধু মনির, মুজিব মেম্বার) মানুষ আমরা পোস্টার লাগাতে সাদর পাড়া স্টেশনে মুফিদ ভাইয়ের নেতৃত্বে আসি। নিজ হাতে সকল পোস্টার ছাঁটানো নিজেই করেন এবং ঘোষণা দেন প্রয়োজনে মরবো তবুও তার কেন্দ্র চাইন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রক্ষা করবে।

৩০ ডিসেম্বর ২০১৮, দক্ষিণ মিঠাছড়ির চাইন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যখন বিএনপি দলীয় কাউকে এজেন্ট বসতে দিচ্ছিলনা। তখন তিনি একাই গিয়ে এজেন্ট বসার অংগীকার করেন ফলশ্রুতিতে আওয়ামীলীগের গুন্ডা বাহিনী দ্বারা বিভীষীকাময় ও নারকীয় হামলার শিকার হোন আমাদের  এই ভাইটি। হাজার হাজার মানুষ তার শরীরের রক্তপাত দেখে মনে করছিলো ঐদিনই তিনি মারা যাবেন। মহান রাব্বুল আলামিনের অসীম কৃপায় তিনি দীর্ঘ ৪ মাস চিকিৎসা (কক্সবাজার,চট্রগ্রাম ও ঢাকা) শেষে সামান্য ভাবে সুস্থ হয়ে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনের দিকে ধাবিত হোন।

তৎকালীন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার হামলার ছবি ও ভিডিও দেখে দলীয় ভাবে বিবৃতি প্রদান করেন।

সে সময়ের হামলায় বেশ কয়েকবার তাকে অপারেশন করতে হয়েছিলো।

এরপর তার হাতে গুরু দায়িত্ব উপজেলা তাঁতীদলের সাধারন সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে। সে দায়িত্ব সততা ও আপোষহীন ভাবে পালন করে যাচ্ছিলেন। ২০২২ সালে কুমিল্লা মহা সমাবেশে কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায় নিজের মোটর সাইকেল চালিয়ে সমাবেশে যোগ দেন তিনি।

বিএনপির যাবতীয় প্রোগ্রাম, আন্দোলন ও সংগ্রামের এ আপোষহীন সৈনিক ২০২৩ সালের জুনে মহিষের শিং এর আঘাতে পাকস্থলীতে আঘাত পেয়ে দীর্ঘ ৪ মাসের চিকিৎসা শেষে ১২ অক্টোবর আমাদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে মহান রাব্বুল আলামিনের জিম্মায় চলে যান।

আজকে তার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান পান।

পরিশেষে তার রেখে যাওয়া সন্তানদের সুস্থতা ও সার্বিক উন্নতি কামনা করি।

সাঈদ হোসাইন আকাশ
যুগ্ম আহ্বায়ক
রামু উপজেলা ছাত্রদল